চাঁদপুর: পদ্মা নদীর স্রোত এসে পড়ে চাঁদপুর সদর এলাকার মেঘনা নদীর একটি বিশাল অংশ জুড়ে। যে কারণে এই স্থানে বেশী সময় ইলিশ বিচরণ করতে পারে না। এরপর নদীর বিভিন্ন এলাকায় চর জেগে উঠেছে এবং পানিতে দূষণ। এসব কারণে নদীতে অনেক সময় থেকেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে জ্বালানি খরচও উঠেনা। এরপর আবার ইলিশের ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের দেয়া ২৫ কেজি চাল দিয়ে আমাদের ৫-৭ জন সদস্যের সংসার চলবে কিভাবে। অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে এসব কথা বলেছেন সদর উপজেলার আনন্দ বাজার এলাকার জেলে হাসান আলী, শাহ আলম ও রাশেদ।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের আনন্দ বাজার জেলে পল্লীতে গিয়ে কথা হয় একাধিক জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীর সাথে। ওই জেলে পল্লী ঘুরে দেখাগেছে, অনেক জেলে নৌকা ও জাল ডাঙায় উঠিয়ে রেখেছেন। অনেকেই জাল ও নৌকা উঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চাঁদপুর মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, বুধবার (১১ অক্টোবর) মধ্য রাত থেকে অর্থাৎ ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে। এ সময় ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ, বিনিময় ও পরিবহন নিষিদ্ধ। কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স দিন এবং রাতে অভিযানের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করবে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ^র ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাল কুড়ালী বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই নদীতে মাছ ধরি। আমার বয়স এখন প্রায় ৫০। কিন্তু বর্তমান সময়ে নদীতে নেমে মাছ ধরা খুবই সমস্যা। কারণ অভিযান ছাড়াও আমাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে যায়। কোন ধরণের জাল দিয়ে মাছ ধরা যাবে এটি আগে নির্ধারণ করতে হবে।
একই ধরণের কথা বললেন ওই এলাকার জেলে শাহ আলম। তিনি বলেন, কারেন্টজাল নিষিদ্ধ। কিন্তু জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে আমাদেরকে যে সুতার জাল দিয়েছে। সে জাল দিয়ে মাছ ধরলেও অভিযান ছাড়া আমাদেরকে টাস্কফোর্সের লোকজন ধরে নিয়ে যায়। আমরা খুবই বিপাকে আছি।
আনন্দ বাজার এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী হাসান আলী বেপারী, জেলে রবিউল দেওয়ান, মাইনুদ্দিন ও জাকির হোসেন জানান, মা ইলিশ প্রজননের জন্য সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তা আমরা মানি। কিন্তু যে ২৫ কেজি চাল দেয়, তা দিয়ে ৫-৭জনের সংসার চলে না। কারণ বাজারে এখন প্রতিটি খাদ্য পণ্যের দাম অনেক বেশী। সরকার আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলাদা দৃষ্টি দিতে হবে। আর না হয় সন্তানদের খাবার জোগার করতে আইন অমান্য করে নদীতে নামতে হবে।
হাইমচর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব রশীদ জানান, মা ইলিশ রক্ষায় উপজেলার প্রত্যেকটি পাড়া-মহল্লায় ব্যাপক প্রচার করা হয়েছে। জেলেদেরকে এই সময় নদীতে না নামার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়ছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, মা ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য আমরা নদী উপকূলীয় উপজেলা মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিন, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলায় সচেতনা সভা করেছি। জেলেরা আমাদেরকে বলেছে তারা ইলিশ আহরন থেকে বিরত থাকবে। বিকল্প হিসেবে নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ শেষ পর্যায়ে। আশা করি কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে জাতীয়ভাবে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই কর্মসূচি ভূমিকা রাখবে।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যেসব জেলেরা নদীতে মাছ আহরণ করবে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদন্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।
ফম/এমএমএ/