নির্বাচনী এলাকায় আমরা কোন অস্ত্র দেখতে চাই না: ডিসি অঞ্জনা খান মজলিশ

চাঁদপুর: চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, আপনারা সবাই চাচ্ছেন সুষ্ঠু, সুন্দর ও অবাধ একটি নির্বাচন। এজন্য আপনাদের অভিনন্দন। আমরাও চাই হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ এবং নিরপেক্ষ। নির্বাচন করতে সবচাইতে বেশী প্রয়োজন প্রার্থীদের সহযোগিতা। আপনারা যারা নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন, তারা যদি নির্বাচনের আচরণ বিধি লঙন না করেন তাহলে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। আপনাদের কাছে যে আচরণ বিধি পৌঁছানো হয়েছে, তা যদি আপনারা না মানেন তাহলে কিন্তু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। প্রশাসন কখনই চায় না নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হউক। এর জন্য আমাদের যা প্রয়োজন সেটা আমরা করব। যার প্রথম প্রদক্ষেপ হিসেবে আজকে আপনাদেরকে নিয়ে মতবিনিময়।

শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন-২০২১ উপলক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীগণের সাথে আচরণ বিধি ও আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আপনাদের নিয়ে বসেছি আচরণ বিধিতে কি আছে সেটা জানার জন্য। নির্বাচন কমিশন প্রতি উপজেলায় আচরণ বিধি দেখার জন্য বলেছেন ১জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেয়ার জন্য কিন্তু আমরা দিয়েছে দুইজন। এর মধ্যে শাহরাস্তি দুইজন এবং হাজীগঞ্জ দুইজন। আজ থেকে তারা খুবই কঠোরভাবে আচরণ বিধি মনিটরিং করবে। তারা বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে দেখবে। আপনারা (প্রার্থীরা) নির্বাচনী ক্যাম্প করেছেন, এটি সুরক্ষার দায়িত্বও আপনাদের। ক্যাম্পে একটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাবেন। ক্যাম্পে কোন হামলা হলে ফুটেজ থাকবে। সেই ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত করবে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আপনি নিজের ক্যাম্প নিজে ভাঙবেন আরেকজনের দোষ দিবেন তাত হবে না। সেই তথ্য আমাদের কাছে থাকবে। কাজেই আপনারা সতর্ক থাকবেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, আপনারা সদর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিন উপজেলার নির্বাচন দেখেছেন। সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। সারা বাংলাদেশে সে নির্বাচন প্রশংসিত হয়েছে। মতলব উত্তরে নির্বাচন করা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ সেখানে অনেক ইউনিয়ন নদী বেষ্টিত এবং চর এলাকায়। সেখানে আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী আনসার, বিজিবি ও র‌্যাবসহ প্রচুর পরিমানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করেছি। আমাদের এখানে সমন্বয়টা খুবই চমৎকার। আমরা সকল কর্মকর্তা সমন্বয় করে একসাথে কাজ করি। কাজেই আপনারা আজকে থেকে সতর্ক থাকেন। আপনারা কেউ যদি নিয়ম ভাঙেন আমরা কউকে ছাড় দেব না। আমরা কোন ব্যাক্তির মুখও চিনবনা, তাদের মার্কাও দেখব না। আমরা দেখব তার কাজ। অর্থাৎ সে কি কাজ করছে তার আচরণ কেমন। আর কেউ যদি প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, তাকেও কিন্তু ছাড়ব না। তার তথ্যও আমাদের কাছে থাকবে। গোয়েন্দা সংস্থা এখানেও কিন্তু আছে। তারাও মাঠে থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। আপনারা কি করছেন, কার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন সে তথ্য আমাদের কাছে আসবে। আমরা কি ধরণের নির্বাচন করতে চাই তা আপনাদেরকে বলেছি এবং দেখিয়ে দিয়েছি। আমাদের নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। প্রশ্ন তুলেন আপনাদের কাজ নিয়ে। আপনাদের আচরণ সঠিক না হলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আপনারা জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইবেন। আপনাদের আচরণ যেন ভাল হয়। সেখানে যদি আপনারা দাম্বিকতা, পেশিশক্তি, টাকা ও অস্ত্র দেখান, তখন আমরাও দেখাব।
তিনি বলেন, আপনারা বলেছেন কারো কাছে কোন অস্ত্র নেই। আজকে থেকে আমরা ধরে নিব কোন অস্ত্র নেই। যদি থাকে তা অবৈধ। আপনাদের কাছে বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র যেটাই থাকুক তা থানায় নিয়ে জমা দিবেন। কোন অস্ত্র আমরা নির্বাচনী এলাকায় দেখতে চাই না। বৈধ অস্ত্র থাকলেও থানায় জমা দিয়ে রাখবেন এবং নির্বাচনের পরে নিয়ে আসবেন। নির্বাচনের আগে আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাড়ী বাড়ী গিয়ে তল্লাশি করব। আমাদের আইন শৃঙ্খলা বহিনী কিন্তু তৎপর আছে।

অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, প্রত্যেক নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেট দেয়ার কথা ৩জন, আমরা দিয়েছি ২০জন। এ নির্বাচনে পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন থাকবে। যাতে একটি সুন্দর নির্বাচন হয়। এজন্য আপনারা কোন চিন্তা করবেন না। যে কয়দিন সময় আছে ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চান। অন্য কোন চিন্তায় যাবেন না। তাহলে আমাদের চিন্তাও কঠিন হয়ে যাবে। আপনার আচরণ সুন্দর করবেন, মানুষ আপনাকে ভোট দিবে।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার এর সঞ্চালনায় পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ বক্তব্যে বলেন, আমরা যারা সরকারি কর্মকর্তা তারা নির্বাচন কমিশনের আওতায় কাজ করছি। নির্বাচন আচরণ বিধি জানার পর এর বাহিরে কোন কাজ করবেন না। আপনাদের আগের কাজগুলো আমরা দেখেছি। কিন্তু আজকে থেকে সেগুলো করা যাবে না। আপনারা যদি কোন বিশৃঙ্খলা না করেন, তাহলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কারণ আপনারা আগের নির্বাচনগুলো দেখেছেন। আমি চাঁদপুরে আসার পূর্বে জেনেছি হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলার মানুষ খুবই ভাল। এখানে অভদ্র কেউ নেই।

তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য আপনার বড় একটি অংশ। আপনাদের মধ্যে অনেকের পেশি শক্তি আছে, কেউ পালোয়ান আছেন, টাকার শক্তি আছে আবার কারো অন্য কিছু আছে। কিন্তু নির্বাচনে কেউ সেগুলো প্রদর্শন করবে না। আমরা শতভাগ নির্বাচন করতে চাই। অর্থাৎ ভোটারমুখী নির্বাচন। ভোটাররা তাদের ভেঅট দিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করবেন। এর বাহিরে যাওয়ার কারো সুযোগ নেই। আমি আবারও বলতে চাই, কাউকে একটি জাল ভোট দিতে দিব না। জোরপূর্বক কোন ভোট কেন্দ্রে ডুকতে দিব না এবং জোর করে কেউ ভোট নিতেও পারবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে সরকারের ৪০জন করে লোক থাকবে। কেন্দ্রে আপনাদের আচরণ উপর নির্ভর করবে আমাদের এক্যাশন। আমি চাইবনা আমার সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার হউক। এরকম হলে কারো জন্য সুখকর হবে না।

এসপি বলেন, আপনাদের নির্বাচনী ক্যাম্প সংরক্ষণের দায়িত্ব আপনাদের। নির্বাচনী ব্যয়ের অর্থ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাবেন এবং আপনার লোক দিয়ে তা পাহারা দিবেন। হাবু মিয়ার ক্যাম্প ভেঙে কাবু মিয়ার দোষ দেয়া যাবে না। আমাদের কাছে অভিযোগ করে পুলিশ সদস্যদের ব্যস্ত রাখবেন সেটা হবে না। আপনাদের ক্যাম্প পোড়ানো হলে ফুটেজ দেখে লোক শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিব। এর কোন ব্যতয় যেন না হয়। ক্যামেরা লাগানোর জন্য খরচের টাকা আলাদা করে রাখবেন। কোন প্রকার তোরণ নির্মাণ করা যাবে না। তোরণ নির্মাণ করা হলে আচরণ বিধির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

পুলিশ সুপার বলেন, নির্বাচনের যারা এজেন্ট থাকবে তাদের তালিকা আগইে পাঠাবেন। যাতে ভোট শুরু করতে দেরি না হয়। গননার সময়ের জন্য প্রত্যেক প্রার্থী একজন এজেন্টকে নির্দিষ্ট করে রাখবেন। ভোট কেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ। যানবাহন চালানো যাবে না। যারা চলতে অক্ষম তারা যানবাহন ব্যবহার করবে।

মিলন মাহমুদ বলেন, আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন পুলিশ এবং প্রশাসনকে টাকা দেয়ার চেষ্টা করছেন। যারা দিতে চাচ্ছেন এবং নিতে চাচ্ছেন তাদের জন্য সংবাদ হলো আমাদের কোন টাকা পয়সার প্রয়োজন নেই। আমার পুলিশকে কোন টাকার দরকার নেই। যারা প্রার্থী টাকা দিতে চাচ্ছেন, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার লোক কিন্তু সবার পিছনে আছে। পুলিশ এবং আপনাদের সকলের আচরণই গোয়েন্দা সংস্থা দেখছে। যদি এ ধরণের কোন ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা হবে। এই ধরণের কাজে জড়িত পুলিশসহ সকলকেই ধরব। আপনি টাকা দিতে না চাইলে কেউ জোর করে নিবে না। আপনার সুবিধার জন্য টাকা দিতে চাইবেন, এই কাজটি মোটেও করবেন না। টাকা পয়সা খরচ না করে ভোটারের মন জয় করার চেষ্টা করেন। ভোটারদের কাছে গিয়ে আপনাদের এজেন্টার কথা বলেন। আমরা শতভাগ সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করব। গত নির্বাচনগুলোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। আজকে থেকেই আপনাদের সকল কার্যক্রম আমি নিজে ও আমাদের পুলিশ বাহিনী মনিটরিং করবে।

আরো বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল) সোহেল মাহমুদ, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোমেনা আক্তার ও চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্ম তোফায়েল আহমেদ।

শুরুতেই প্রার্থীদের আচরণ বিধি ও আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত তথ্যাদি উত্থাপন করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল মোর্শেদ এবং আচরণ বিধির একটি কপি প্রত্যেক প্রার্থীর হাতে পৌঁছানো হয়।

সভার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ উপস্থিত দুই উপজেলার দুইজন করে চেয়ারম্যান প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য প্রার্থী ও সাধারণ ওয়ার্ডের দুইজন করে ইউপি সদস্য প্রার্থীর বক্তব্য দেয়ার সুযোগ করে দেন। প্রার্থীরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

সভায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন।
ফম/এমএমএ/