না ফেরার দেশে প্রবীণ সাংবাদিক আহসানুজ্জামান মন্টু, স্মৃতির পাতা থেকে

আহসানুজ্জামান মন্টু। ছবি: সংগ্রহীত।

আজ ঘুম থেকে উঠে এফবি তে চোখ যেতেই প্রেসক্লাব সভাপতি রহিম বাদশা-র দেয়া পোষ্টে পেলাম এক শোক সংবাদ। সারাদিনই মনটা ছিলো বিষন্ন ও শোকাচ্ছন্ন। অনেকদিন র্বাধ্যক্যজনিত রোগে অসুস্থ থাকার পর ঢাকায় আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ভোর ছয়টায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন আমাদের শ্রদ্বাভাজন প্রবীণ সাংবাদিক আহসানুজ্জামান মন্টু ভাই। ( ইন্নালিল্লাহে—— রাজেউন) ।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৩বছর। তিনি স্ত্রী, ২মেয়ে ও এক ছেলে এবং অসংখ্য বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজন রেখে যান। তিনি মৃত্যুর আগে ওসিয়ত করে যান যেনো পয়াল গাছার চৌধুরি বাড়ির জামে মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা উত্তর পাড়ায় তাঁকে তার শ্বশুরবাড়ি- চৌধুরি বাড়ি -র ছায়াঘেরা বাগানে জামে মসজিদের পাশে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয় ।এ সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ছাড়াও, নিকট আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

এর মধ্যে প্রেসক্লাবের পক্ষে অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ, মরহুমের ভাগ্নে প্রবীণ আইনজীবী এড. জামিল হায়দার বুলবুল, ঢাকার দৈনিক প্রেজেন্ট টাইম পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ওমর ফারুক জালাল , ফরিদগঞ্জ ও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অনেক স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন ।

তিনি ১৯৭২ সালে চাঁদপুর প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন । তিনি প্রথমে দৈনিক আজাদ ও পরে প্রখ্যাত সাংবাদিক এনায়েতউল্লাহ খান সম্পাদিত বাংলাদেশ টাইমস প্রত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ছিলেন ,(১৯৯৭ সালে বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত।) এসময় তিনি সাহসিকতার সাথে চাঁদপুরে অনেক র্দুর্নীতি , অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্বে নিউজ প্রকাশ করেন। তিনি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য  ও ৩বারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৮৫ সাল থেকে কয়েক বছর আগ পর্যন্ত তিনি রেডিও বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তার বাবা মৌলভী মো ইদ্রিস মিয়া ছিলেন লেডী দেহলভী জুনিয়র র্গালস স্কুলের সহকারি শিক্ষক । বাস করতেন মোহাম্মদী হোস্টেলে- যা এখন সরকারি মহিলা কলেজের অফিস ও অধ্যক্ষের রুম । পরে বাসাবাড়ি করেন শহরের নাজির পাড়ায়।

দেশ স্বাধীনের পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ (অর্থনীতি) পাশ করার পর শাহতলী কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ছিলেন কুমিল্লা শিক্ষার্বোেডর পরীক্ষক। তিনি পরে ১৯৮১ সালের শেষের দিকে পুরানবাজার কলেজের প্রতিষ্ঠার পর খন্ডকলিীন অর্থনীতির অধ্যাপকও ছিলেন। তিনি চাঁদপুর বিএভিএস এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন ৭/৮ বছর। রেড ক্রিসেন্ট ও রোটারি ক্লাবের সদস্য ছিলেন।

তিনি প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতিও ছিলেন। কেমিষ্ট ও ড্রাগিষ্ট সমিতিরও সভাপতি ছিলেন। তিনি জীবদ্দশায় ভারত তথা উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুফী সাধক হযরত নিজামুদ্দীন আওলিয়া ( রা:)এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। পবিত্র হজও পালন করেন ২০১০ সালে ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন বিদেশে শিক্ষা সফরের অংশ হিসেবে ভারতের তখনকার মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী ভিভি গিরির সাথে তাঁর দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাত করে করমর্দন করেন। তাঁর প্রথম মেয়ে সনম ঢাকায় এনজিওর প্রধান র্কমকর্তা । ২য় মেয়ে জিহান স্বামী ফয়সল হোসেন,ও বাচ্চাসহ বিদেশে বসবাস করছেন । একমাত্র ছেলে মিয়া মো: ফয়সলুজ্জামান ঢাকায় কর্মরত।

মন্টু ভাইয়ের পরিবারের সবাই আমাদের সকলের কাছে একান্তভাবে দোয়া চেয়েছেন।

লিখেছেন: অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ
সাবেক সহ সভাপতি, চাঁদপুর প্রেসক্লাব ।
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫খ্রি.