
নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে চলছে এবারের বইমেলা। অল্প সময়ে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে মেলার সময় বাড়ানো হয়েছে ১৭ মার্চ পর্যন্ত। এ নিয়ে প্রকাশক, পাঠক ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সন্তুষ্টির অন্ত নেই। আজ শুক্রবার মেলার ১৮তম দিন। ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।
আজ মেলায় নতুন বই এসেছে ২২০টি। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী আজকেও ছিল শিশুপ্রহর। সকাল থেকে শিশুদের বিচরণে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। জুমার পর বেলা বাড়তেই জমে উঠেছে বইমেলা।
সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় তিল ধারণেরও জায়গা নেই। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবারের বইমেলায় তরুণ লেখকদের চাহিদা বেশ ভালো। তাদের হাত ধরেই সমৃদ্ধ হবে সাহিত্য ও জ্ঞানভাণ্ডার, এমনটাই প্রত্যাশা।
নতুন লেখকদের চাহিদা ভালো বইমেলায়:
হুমায়ূন, জাফর ইকবাল, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতো লেখকদের চাহিদা সবসময়ই শীর্ষে থাকে। তবে দিন গড়াতেই জনপ্রিয়তার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে কিঙ্কর আহসান, সাদাত হোসাইন, আব্দুল্লাহ আল ইমরানের মতো নাম। মেলায় ঘুরে দেখা যায়, প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি নতুনদের চাহিদাও পাঠকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। বিক্রয়কর্মী ও সংশ্লিষ্টরাও এমনটাই জানালেন।
অন্বেষা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী আশিক আহমেদ বলেন, সব ধরণের বইয়ের পাশাপাশি এবারে আমাদের তরুণ লেখকদের বই তুলনামূলক ভালো বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে আব্দুল্লাহ আল ইমরানের ‘দিবানিশি’, ‘চন্দ্রলেখা’, ‘কালচক্র’, কিঙ্কর আহসানের ‘ বিবিয়ানা’, ‘মেঘডুবি’, জুয়েল আহসান কামরুলের ‘সাকুরা’, ‘দ্বীপদেশের জেলখানা’, জুনায়েদ ইসলামের ‘দ্য রেড ডোর’, ‘অসমাপ্ত ক্যানভাস’, ‘এক হাজার সূর্যের নিচে’, এই বইগুলো বেশ ভালো বিক্রয় হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘দ্য রেড ডোর’ বইটি আমাদের স্টক আউট হয়ে গেছে। পাশাপাশি নিশাত ইসলামসহ আরও কয়েকজন তরুণ লেখকের বই ভালো বিক্রি হচ্ছে।
অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রকর্মী এনামুল হক বলেন, আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বইমেলায় বেশ ভিড়। তরুণদের গল্প, কবিতা ও উপন্যাসের মধ্যে তুলনামূলক গল্প-উপন্যাস ভালো বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদ এজাজ হোসেনের ‘মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর’ বইটা আমাদের বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও তৌহিদুর রহমান, নিশাত ইসলাম, ইব্রাহিম ওবায়েদের বইয়ের চাহিদাও বেশ ভালো।
এ বছর বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে মারুফ হাসান প্রত্যয়ের লিখিত কাব্যগ্রন্থ ‘হয় মৃত্যু নাহয় কবিতা’। পাঠকমহলে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এটি আমার লেখা প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। সে হিসেবে আমি পাঠকদের কাছ থেকে বেশ ভালোই সাড়া পাচ্ছি। এখানে ঢাকায় বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে বইটি। পাশাপাশি চট্টগ্রামের বইমেলায়ও বইটির চাহিদা সন্তোষজনক।
তিনি বলেন, নতুন লেখক হিসেবে আমি মনে করি সমালোচক মহলে বইটি পৌঁছালে নতুন কিছু বেরিয়ে আসবে এবং বইটি পাঠকদের কাছে আরও ভালোভাবে পৌঁছাবে।
মেলায় ঘুরতে এসেছেন মিজানুর রহমান। কিনেছেন একাধিক বইও। পছন্দের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি কিছুদিন পর পর মেলায় আসার চেষ্টা করি। নিজের জন্য এবং ছোট ভাইবোনদের জন্য বই কেনা হয়। সেক্ষেত্রে তরুণ লেখকদের একটু প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, মেলার শুরুর দিকে আমি সৈয়দুল হকের লেখা ‘প্রশংসিত’ বইটি কিনি এবং বইটি আমি এখন পড়ছি। এটি রাসুল (সা.) এর জীবনের ইতিহাসনির্ভর একটি উপন্যাস। পড়ে যা বুঝতে পারলাম, আমাদের তরুণদের দেখার চোখ এবং লেখার হাত একটু ভিন্ন। ছোট ছোট বাক্যের সাবলিল কাব্যিক গদ্য বইটিকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ সময়ে আমাদের তরুণদের লেখালিখির পথে আসাকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। এছাড়াও ক্ল্যাসিক ও জনপ্রিয় পুরোনোদের পাশাপাশি নতুনদের নিয়ে যে একটা পাঠকসমাজ তৈরি হচ্ছে এটাও প্রশংসার দাবি রাখে। এভাবে তরুণরা এগিয়ে গেলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সাহিত্য ও জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে।-খবর বিডি জার্নাল।
ফম/এমএমএ/