নতুন প্রজন্মের জন্য মডেল হয়ে আমাদেরকে দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করতে হবে

--- জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। ছবি: ফোকাস মোহনা.কম

চাঁদপুরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

চাঁদপুর: চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, আজকে আমরা বিজয়ের ৫০ বছরে পদার্পণ করলাম। সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা, সকল শহীদ এবং নির্যাতিত মা-বোন ও ৪ নেতাকে। যাদের রক্ত ও আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। ৫০ বছর পদার্পনে আজকে আমাদের ভেবে দেখা দরকার, ৫০ বছরে আমাদের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি কতটুকু। অর্থাৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে যে একটি দেশ তিনি গড়তে চেয়েছিলেন। সে চেতনা আমরা নিজেদের এবং আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে সৃষ্টি করতে পেরেছি কিনা। সেটা আমাদের ভেবে দেখা দরকার। আমরা কথায় কথায় বলি বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, কিন্তু আসলে আমরা কতটুকু তার আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করি। এটা আমার মনের মাঝে প্রশ্ন আসে, আসলে আমরা কতটুকু ধারণ করি।

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

ডিসি বলেন, আব্দুল আলিম চৌধুরী মেয়ে বলেছিলেন, ক্ষমতার চেয়ারে যারা আছেন, তারা যখন ছোট ছোট আপোষ করেন, আপনাদের যে আপোষ আপনাদের জন্য কিছু না। কিন্তু আমাদের চিন্তা চেতনায় তা বড় ধরণের সুনামি বয়ে নিয়ে আসে। আসলেই তাই। হয়ত ক্ষমতার চেয়ারে আমরা যারা আছি, আমাদের হাত দিয়ে অনেক ছোট বিষয় স্বাক্ষর করে ফেলছি, সে স্বাক্ষরে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, দেশের উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, তাদের চেতনায় যে কত বড় ঝড় উঠে, কত বড় বিপর্যয় আসে, তা কিন্তু আমরা ভেবে দেখি না। যাদেরকে আমরা বিশ্বাস ও যাদের উপর নির্ভর করি, তাদের মধ্যে যখন এসব দেখি, তখন আসলে মুসড়ে পড়ি।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে ভাবতে হবে, আমরা যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এবং দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, আসলে আমরা দেশটাকে কোন জায়গা নিয়ে যেতে চাই। আমরা যেন সুন্দরভাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারি, আর আমাদের দেখে যেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম উৎসাহিত হয়। তারাও যেন আলোকিত পথের যাত্রী হয়। আরা তা না হলে তারাও অন্ধকার পথে চলে যাবে। আমরা যদি তাদের জন্য পথ সৃষ্টি করতে না পারি, তাহলেও নতুনরাও অন্ধকারে নিমোজ্জিত হবে।

অঞ্জনা খান বলেন, ৫০ বছরে আমাদের প্রাপ্তি অনেক। অপ্রাপ্তি কিছু আছে। আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যে শক্ত হাতে দেশ চালাচ্ছেন। সমৃদ্ধির পথে দেশ এগিয়ে চলছে। আমাদের বড় বড় অনেক অর্জন আছে। কিন্তু সে অর্জনকে আরো শক্তিশালী করতে হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা যারা বড় বড় দায়িত্বে আছি, তাদেরকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আমাদের দায়িত্ববোধ ও কাজ দেখে নতুন প্রজন্ম শিখবে। আমাদেরকে তাদের রোল মডেল ভাববে। আর আমাদেরকে সেভাবেই কাজ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার মঞ্চ করা হয়েছে এই কারণে, যাতে আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে পারি। সে জন্য আমাদের সেভাবে কাজ করতে হবে। এই মেলা আরো বেশ কিছুদিন চলবে। এর মধ্যে আপনাদের ছোট ছোট যেসব ত্রুটি আছে সেগুলো ঠিক করে নিবেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, পুরানবাজার ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুদার ও বিশিষ্ট ছড়াকার ডা. পিযূষ কান্তি বড়ুয়া।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন দৈনিক সুদীপ্ত চাঁদপুর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এম এর ইসলাম বাবু।

আলোচনা সভার পূর্বে মহান বিজয় দিবস ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি উদযাপন উপলক্ষে শিশু একাডেমি আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার তুলে দেন প্রধান অতিথিসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

আলোচনাসভা শেষে বিজয়মেলা মঞ্চে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও নৃত্যাঙ্গনের শিল্পীরা সংগীত এবং নৃত্য পরিবেশন করে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষে ৩২ জানালা নাটক মঞ্চস্থ হয়।

ফম/এমএমএ/

শাহরিয়া পলাশ | ফোকাস মোহনা.কম