ধলাইতলী জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে তদন্তে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় কর্মকর্তা

অভিযুক্ত সভাপতির লোকদের মারমুখি আচরণে ব্যহত হয় সঠিক তদন্ত

চাঁদপুর: চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার ধলাইতলী জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের নতুন কমিটি অনিয়মের মধ্যে নির্বাচন ছাড়াই গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত ও যাচাই বাছাই করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ জাকির হুসাইনকে। জাকির হোসাইন তদন্তে গিয়ে অভিযুক্ত কমিটির সভাপতি মো. ইউসুফ পাটওয়ারীর বহিরাগত লোকজনের প্রভাব ও হুমকি ধমকির কারণে অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। যার কারণে তদন্ত কার্যক্রমটি সঠিকভাবে করা সম্ভব হয়নি। বহিরাগত লোকদের কারণে তদন্ত সংশ্লিষ্ট লোকজন ভয়ে সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ জাকির হুসাইন। তিনি অভিযোগের ভিত্তিতে প্রত্যেক অভিযোগ এক এক করে বিশ্লেষন শুরু করেন। কিন্তু ইউসুফ পাটওয়ারী নিজে চুপ থেকে তার লোকজন দিয়ে পুরো তদন্ত কার্যক্রম ব্যহত করে। তার লোকজনের মারমুখি আচরণ দেখে উপস্থিত অভিভাবক ও শিক্ষকরা সঠিক কথা বলতে পারেননি। পরিচলনা পর্ষদে সদস্য প্রার্থী কবির নামে ব্যাক্তি কথা বলতে চাইলে তাকে তদন্তকারী কর্মকর্তার সামনে মারার জন্য চেষ্টা করে।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন গনমাধ্যম কর্মী। তারাও এসব লোকজনের আচরণ দেখে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। প্রধান শিক্ষকের কক্ষের ভিতর ও বাহিরে শতাধিক মানুষ এসে ভীড় জমায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে এই ধরণের দৃশ্য দেখে অনেকে চলে যায়। কথা বলার ইচ্ছে থাকলেও বলতে পারেনি। পুরো তদন্ত কার্যক্রম ইউসুফ পাটওয়ারীর লোকজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী শেষ হয়।

দেখাগেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্ত কমিটির বিষয় সম্পর্কে সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের কাছ থেকে জানতে চান কমিটির বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কি? তখন অভিভাবক সদস্য যারা তারা ইউসুফ পাটওয়ারীর লোক হিসেবে কোন কথা বলতে রাজি না। সকলেই এক বাক্যে বললেন ‘কোন সমস্যা নেই, স্কুল ভাল চলছে’। ৩জন শিক্ষক প্রতিনিধি তোতা পাখিরমত একই কথা বললেন।

মারমুখী অবস্থায় অভিযুক্ত কমিটির সভাপতির লোকজন।

নির্বাচন তফসিল সম্পর্কে জটিলতা ও অয়িনম হয়েছে। সে বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম রাজা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তার মত করে বুঝিয়ে দিলেন। সেখানে তদন্তকারী কর্মকর্তা চিকিৎসক হিসেবে হয়ত এই সম্পর্কে ধারণা কম রয়েছে। এই বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যাক্তিই বিষয়টি স্পষ্ট বলতে পারবেন এবং বুঝতে পারবেন। ওই বিষয়টি তদন্তে সঠিকভাবে আসেনি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম রাজার আচরণ একজন শিক্ষকের মত মনে হয়নি বলে উপস্থিত অনেকেই মন্তব্য করেন। কারণ তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে কথা বলার বাচন ভঙ্গি সহযোগিতামূলক ছিল না। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করে আচরণ করেছেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, তার অনপুস্থিতি শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা নিয়ে অভিভাবক কবির ও আরেক ব্যাক্তি ওভার রাইটিং করেছেন। উপস্থিত সকলের সামনে ওই অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তারা হাজিরা খাতা দেখেছেন কিন্তু কোন কিছু লিখেননি। ওভার রাইটিং করেছেন হিন্দু ধর্ম বিষয়ের শিক্ষিকা।

তদন্তকারী কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ জাকির হুসাইন উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রিজাইডিং অফিসার সরকারি কর্মকর্তা। তিনি অবশ্যই বিষয়টি জেনে বুঝে করেছেন। সেখানে ভুল না থাকারই কথা। অভিযোগকারী বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মোঃ আবুল কালাম পাটওয়ারীর লিখিত বক্তব্য গ্রহন করেন তিনি। সকলের বক্তব্য শুনে তদন্ত কার্যক্রম ওই অবস্থায় শেষ করেন। নিজস্ব লোক দিয়ে তিনি তদন্তের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলের বক্তব্য ভিডিও রেকর্ড করান।

তদন্তের সময়ে বহিরাগত লোকজন।

এছাড়া নাছির নামে একজন অভিভাবক সদস্য অভিযোগকারী আবুল কালাম পাটওয়ারী বিষয়ে আপত্তি জানান। তিনি বলেন, কমিটি গঠনের পূর্বে আবুল কালাম পাটওয়ারী তাকে ২০ হাজার টাকা নগদ দিবে বলেছেন, যাতে করে তাকে সভাপতি হিসেবে সমর্থন করে।

এদিকে, বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি প্রার্থী মোঃ কবির হোসেন উপস্থিত সকলের সামনে বলেন, তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে এবং পুলিশ দিয়ে ধরে নেয়া হবে। ইচ্ছে করে তার প্রার্থীতা ফরম বাতিল করা হয়েছে।

অভিযোগকারী আবুল কালাম পাটওয়ারী গনমাধ্যমকে বলেন, আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অনিয়মের বিচার চাই। ধলাইতলী জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবৈধ ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে (নির্বাচন) নতুন করে তফসলি ঘোষণা করে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম