মতলব উত্তর (চাঁদপুর): ৮ বছর জরাজির্ণ ঘরে বসবাস করে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বসতঘর মেরামতে সহায়তা পাননি এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। এমনকি অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে চালাতে হতো তাদের সংসার। এই পরিবারের নির্ঘুম রাত কাটছে এই ভাঙ্গাচোরা ঘরে। মতলব উত্তর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের লবাইরকান্দি গ্রামের এই পরিবারটির অসহায়ত্ব নিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য, বিশিষ্ট সমাজসেবক, চাঁদপুর-২ আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী, আহসান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ইসফাক আহসান সি.আইপি.) এর দৃষ্টিতে আসে বিষয়টি।
নিজ শিশু কনার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর হাসপাতালে থেকেও সেই মানবিক সংবাদটি তার দৃষ্টিগোচরে আসার সাথে সাথে ওই অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বসতঘর নির্মাণ করে দিবেন বলে জানানা এবং তার লোকজনকে দিয়ে ওই বাড়িতে ঘরটি নির্মাণের জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রদান করেন। সিংগাপুর থেকে দেশে ফিরে ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে নতুন ঘর উপহার দেন এবং পরিবারটির সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন এম ইসফাক আহসান।
ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ছফি উল্লা গাজীর স্ত্রী লাভলী বেগম। লাভলী বেগম এম ইসফাক আহসানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘সারা জীবন কষ্টই করে গেলাম। সুখ কী জিনিষ জীবনে সেটা বুঝিনি। শেষ বয়সে এসে এমন একটি ঘর পাবো সুন্দরভাবে জীবন কাটাবো এটা ভাবতেই পারিনি। আমাদের মতো আসহায় পরিবারের শেষ আশ্রয় ইসফাক। শত বছর বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে এই মহান ব্যাক্তি।
নতুন ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে লাভলী বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। তবে পেটের কষ্টের চেয়ে ঘরের কষ্ট ছিল অনেক বড়! কারণ ঝড়বৃষ্টিতে সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছিল। কিন্তু এম ইসফাক আহসান আমাদের জন্য যা করল সেটি কোনো দিন ভুলে যাওয়ার মত নয়। আমার পরিবারকে চির ঋণী করে দিলেন, আল্লাহ তার মঙ্গল করুন।
উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের লবাইরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছফি উল্লা গাজী ১৯৭১ সালে ভারতে ট্রেনিং নিয়ে ভারতের হাতিয়া (আগরতলা) ৩০৩ রাইফেল নং হ্যান্ড গ্রেনেড। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলাধীন গোয়ালমারী নামক স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এমএ ওয়াদুদ কমান্ডারের নেতৃত্বে ২নং সেক্টরে মেজর হায়দারের অধিনে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করে কবির আহম্মদ খানের নেতৃত্বে মহাকুমা প্রশাসনের কাছে অস্ত্র জমা দেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় কর্তৃক তার সাময়িক সনদ নং- ম- ১০১১৩৬, তারিখ: ৮/৯/২০০৫ইং মুক্তিযোদ্ধা খসরা তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত আছে যার ক্রমিক নং- ৩৪৫, তারিখ: ২৫/৮/২০০৪ ইং। তিনি ২৭/১০/২০১৪ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পেয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের বাজেট অধিশাখার ১২ জুন ২০১৭ ইং তারিখে ২৪২ নং স্মারকে তাকে জানানো হয় তার মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। তারপর থেকে অদ্য পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোঃ ছফি উল্লাহ গাজীর মুক্তিযুদ্ধের সম্মানি ভাতা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে আবুল খায়ের সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ গৃহহীন অবস্থায় ভূগছিলেন। বসতঘর না থাকায় তিনি অন্যের রান্না ঘরে খুবই বেহাল অবস্থায় দিনাতিপাত করতেন। এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এম ইসফাক আহসানের নজরে আসে। এরপর তিনি ওই অসহায় পরিবারকে বসতঘর করে দেন। শনিবার তিনি ওই বাড়িতে গিয়ে ঘরটি পরিদর্শন করেন। এ নিয়ে মতলবের বিভিন্ন গ্রামে এম ইসফাক আহসান তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রায় ৫০০ টির বেশি পরিবারের মাঝে বসত ঘর উপহার দেওয়া দেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম ইসফাক আহসান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন মানবতার নেত্রী। তিনি আমাদের দেশবাসীকে সারাক্ষণ সেবা করে যাচ্ছেন। দেশের উন্নয়নে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশের অসহায় মানুষের জন্য সবধরে ভাতা ও সুবিধা প্রদান করছেন। প্রধানমন্ত্রীর পাশপাশি আমাদেরকেও কাজ করতে হবে দেশের মানুষের জন্য। তাহলেই আমাদের সমাজ দিন দিন উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। আমরা যারাই রাজনীতি করি তারা কিছু পাওয়ার জন্য রাজনীতি করি না। তাই সকলেই সকলের সাধ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। জনসেবা করতে হলে রাজনীতিটা মূখ্য বিষয় না। ইচ্ছা থাকলে রাজনীতি ছাড়াও দেশের সেবা করা যায়।
তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকদের লিখনির মাধ্যমে সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশের পর আমার দৃষ্টিতে আসলে আমি এই দুটি পরিবারের মাঝে বসতঘর উপহার দিয়েছি। আপনাদের জানামতে যদি কোন পরিবারের যদি ঘর না থাকে, কষ্টে দিনাতিপাত করেন, তাহলে আমাকে জানাবেন আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ঘর করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে আমি সারাজীবন আপনাদের এভাবে সেবা করতে পারি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাস্টার, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি দেওয়ান জহির, প্রচার সম্পাদক রেফায়েত উল্লাহ দর্জি, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমান উল্লাহ সরকার, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারিছ খান, ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সবুজ বেপারী, সাবেক কাউন্সিলর শাহাদাত হোসেন খোকন ঢালি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মিরাজ খালিদ, দূর্গাপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ ইদ্রিছ প্রধান, ইউপি সদস্য মোঃ মানিক, মানবধিকার কর্মী মোঃ মহিউদ্দিন, কলাকান্দা ইউপি যুবলীগের আহ্বায়ক এমএম মনির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম শ্যামল, মোহনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জয়, জহিরাবাদ ইউনিযন যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, এখলাছপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী সোহেল, এখলাছপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি লিটন সরদার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনির মুন্না, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম সরকার, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
ফম/এমএমএ/আরাফাত/