চাঁদপুর: পবিত্র ঈদুল আজহার তৃতীয় দিনে চাঁদপুরের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র তিন নদীর মোহনায় ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। এখানকার মনোরম দৃশ্য ও পরিবেশ দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। যে কারণে ঈদসহ বিশেষ ছুটি দিনে জেলা সদর ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে সময় কাটায়। এখানে বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে নদী পথে ভ্রমণ।
বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় দেখা মিলে হাজার হাজার দর্শনার্থীর। শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সী লোকজন এখানে ঘুরতে এসেছেন। আবার অনেকেই পুরো পরিবার নিয়ে বিকেলের সময়টা এখানে কাটিয়েছেন।
মোহনার স্থানটি ছোট হলেও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যে কারণে দর্শনার্থীরা এটি তিনপাশে বসার জন্য জায়গা পেয়েছেন। হাটার জন্য তৈরী করা হয়েছে পাকা রাস্তা। আবার অনেকেই নিজ উদ্যোগে ট্রলার ও স্পীডবোট নিয়ে মাইকে গান বাজিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে নদীর মোহনায় এসে ঘুরছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণ।
ঈদের সময়টাকে কেন্দ্র করে এ পর্যটন কেন্দ্রে ছোট ছোট খেলনা ও খাবারের দোকান বসেছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রাইডার। তবে এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য কোন ফি নেই।
বেশ কিছু সময় মোলহেডে অবস্থান করে দেখাগেলে দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই ট্রলার করে মেঘনা নদীর পশ্চিমে মিনি কক্স বাজার নামক স্থানে ঘুরতে যাচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে ট্রলার মালিকরা জনপ্রতি নিচ্ছেন ৫০টাকা। ট্রলারে ঘুরার সময় হচ্ছে ৩০ মিনিট। তবে সন্ধ্যার মধ্যেই নদীতে ঘুরা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মোলহেডের বুট বিক্রেতা মাইনুল ইসলাম বলেন, ঈদ ছাড়া প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা বিক্রি করি। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে গত দুদিন প্রায় ২ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়েছে।
তবে ডাব বিক্রেতা চাঁন মিয়া হতাশ। আবাহওয়া শীতল থাকার কারণে তার বিক্রি কমেছে। তিনি আজকে মাত্র ৬শ’ টাকার বিক্রি করেছেন।
সদরের হানারচর ইউনিয়ন থেকে ঘুরতে আসা রবিউল জানান, অবসর সময় পেলে এখানে ঘুরতে আসেন। তবে ঈদের কারণে আনন্দন করার জন্য তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে এসেছেন। এখানে এসে তারা সবাই খুবই মজা করেছেন।
ঢাকা থেকে চাঁদপুরে নানার বাড়ীতে বেড়াতে এসেছেন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মাহি। পরিবারের সকলে বিকেলে ছুটে এসেছেন তিন নদীর মোহনায়। মাহি বলেন, এখানকার পরিবেশ খুই মনমুগ্ধকর। বিশেষ করে নদী। আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে নদী এবং মোহনার দৃশ্য তার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
সদরের বাগাদী ইউনিয়নের ঢালীরঘাট সন্তানদেরকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য এসেছেন পান্না বেগম ও তার আত্মীয় রুজিনা। তারা বলেন, এর আগেও আমরা কয়েকবার এখানে এসেছি। আমাদের শহরে কোন ভাল বিনোদন কেন্দ্র নেই। যে কারণে ঈদের সময় এলে সন্তানদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসি।
নদীতে নিরাপত্তার জন্য সিভিলে এবং পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে চাঁদপুর নৌ থানা পুলিশ। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাইনুলসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য মোলহেডে দায়িত্ব পালন করছেন।
চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ঈদের দিন বিকেল থেকেই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় তিন নদীর মোহনায় নৌ পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নৌ পুলিশ সেখানে অবস্থান করে। এছাড়া আমরা মাইকিং করে ট্রলার মালিক এবং স্পীডবোড মালিকদের অতিরিক্ত যাত্রী না নেয়া এবং সন্ধ্যার মধ্যে নৌ ভ্রমন বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
ফম/এমএমএ/