
চাঁদপুর : মাঘ মাসে হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরে আলুসহ চলতি রবি মৌসুমে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে থেকে কয়েক ঘন্টার ভারি বর্ষণে অধিকাংশ ফসলি জমির বীজতলায় পানি জমে গেছে। জমিতে হেলে পড়েছে সরিষার গাছ। তাছাড়া নিচু জমির শাকসবজির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। তবে পরপর দুই দফার বৃষ্টিতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন আলু চাষিরা। ডিসেম্বরে প্রথম দফা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে থাকায় ২হাজার ৩শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা সম্ভব হয়নি।
চাঁদপুর কৃসি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, লাভজনক ফসল এবং উপযোগী মাটি হওয়ায় নদী বিধৌত চাঁদপুর জেলায় আলু চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে দেশে আলু চাষে চাঁদপুর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে চাঁদপুরে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার ৫শ হেক্টর। এর মধ্যে বীজতলায় পানি জমে থাকায় আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা দুই মেট্টিক টন।
অন্যান্য বছরের ন্যয় এবারও চাঁদপুরে কৃষকরা বুকভরা আশা নিয়ে আলু চাষ করেছে। আর মাত্র অল্প কয়েক দিন পরেই কৃষকদের সেই কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে অসময়ের বৃষ্টি সেই স্বপ্ন যেন দু:স্বপ্নে রূপ নিচ্ছে। এভাবে বৃষ্টির পানি নিস্কাশন না হলে কয়েকদিনে আলুর জমিগুলো বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমামুদপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর ব্লকের কৃষক জামাল গাজী ও খোকন গাজী বলেন, গত বছর ৩০ নভেম্বর তারা ১শ’ ১২ শতক জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। এরপর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ঘুর্ণিঝড়ে আলুর বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। তারপর ধার-দেনা করে পুনরায় আলু বীজ লাগান। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টিতে আলুর বীজতলায় পানি জমে গেছে। এমনিতে আলুর দাম কম, তারপর হঠাৎ বৃষ্টিতে আলুর বীজতলার ক্ষতি হলো। এই ক্ষতি তারে পুষিয়ে উঠতে পারবো কি না তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছি। এভাবে দু-তিনদিন আলু পানিতে ডুবে থাকলে সব আলু নষ্ট হয়ে যাবে। এতে করে বিপুল ক্ষতিতে পড়তে হবে আমাদের।
একই গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, লাভ-লোকসান যা-ই হোক আলুর আবাদ তাদের প্রধান ফসল। গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবারও তিনি ৩৩ শতক জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। আর কয়েক দিন পর আলু উত্তোলন করার কথা। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির কারনে বেকায়দায় পড়েছেন তারা।
সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের কৃষক বিলাল হোসেন বলেন, এই বছর অনেক আশা নিয়া আলু আবাদ করলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আলু একদম শেষ। এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠব তা ভাবতে পারছি না। এ অবস্থায় তাদের দাবী কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি যদি তাদের প্রণোদনা বা অন্য কোনভাবে সহায়তা করেন, তবে তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নরেশ চন্দ্র দাস বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরের রবি মৌসুমে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্য ৭ হাজার ১শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। তবে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে দুই দফায় বৃষ্টির কারণে আলু উৎপাদন কিছুটা বিঘ্ন হবার আসংখ্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য ফসলেরও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপরে আমাদের মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ চলছে। অচিরেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ নির্ধারণ করা হবে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব। এই খাতে সরকার নানাভাবে কৃষকদেরকে সহযোগিতা করছে। বৃষ্টিতে কৃষকদের ক্ষতি পূষিয়ে দিতে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি কোন সহায়তা পেলে তা আমরা যথা সময়ে পৌঁছে দিব।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চাঁদপুরে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২ লাখ মে.টন এরমধ্যে চাঁদপুর সদরে ১ হাজার ৭শ’ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩৫ হাজার ৮৮ মে.টন। মতলব উত্তরে ৬শ’ ২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১২ হাজার ৭শ’ ৯৭ মে.টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৭শ’ হেক্টর এবং উৎপাদন ৭৬ হাজার ৩শ’ ৬৮ মে.টন। হাজীগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৭শ’ ২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১৪ হাজার ৮শ’ ৬১ মে.টন। শাহরাস্তিতে চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ২০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৪শ’ ১২ মে.টন। কচুয়ায় চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৫শ’ হেক্টর এবং উৎপাদন ৫১ হাজার ৬শ’ মে.টন। ফরিদগঞ্জে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯০ হেক্টর এবং উৎপাদন ১ হাজার ৮শ’ ৫৭ মে.টন এবং হাইমচরে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১শ’ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন ৩ হাজার ৯৬ মে.টন ।
ফম/এমএমএ/