টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে পিডিবির বিনামূল্যের গ্রাহকসেবা!

চাঁদপুর: পিডিবির বৈদ্যুতিক খুঁটি হতে বিচ্ছিন্ন লাইনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে ২০০শ’ থেকে ৫০০ শত টাকা বাধ্যতামূলক হোক সেটা পিডিবির লাইনম্যান অথবা স্বঘোষিত লাইনম্যান। যার কারণে টাকা দিয়েই নিতে হচ্ছে চাঁদপুর পিডিবির বিনামূল্যের গ্রাহকসেবা নিতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

খোঁজ নিয়ে এবং ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, কোনো বিদ্যুৎ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ তার সংযোগ দেয়া খুঁটি হতে বিচ্ছিন্ন হলে বা লাইনে কোনো সমস্যা হলে বা কার্বন পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ বিভাগের জরুরি বিভাগে অভিযোগ করতে হয়। পরে সে অভিযোগ পেয়ে বিদ্যুৎ কর্মী বা লাইনম্যান ও সহকারী লাইনম্যান এসে সংযোগ ঠিক করে দিয়ে থাকেন। বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যানের অপেক্ষা করতে করতে অস্থির অবস্থায় পড়তে হয়। আবার অনেক সময় পিডিবির জরুরি বিভাগের ল্যান্ডফোন ও মোবাইল নাম্বারে ফোনের পর ফোন করেও কাউকে পাওয়া যায় না।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) চাঁদপুর পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডে কোলেস্টের ফিডারে একজন দোকানদার সোমবার অভিযোগ করে রাখেন। মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে লাইনমেন মোস্তফা ও সাথে আরও কয়েকজন গাড়ি নিয়ে সংযোগ দিতে এলে পাশের আরেক দোকানদার তার লাইন নেই বলে জানান। লাইনম্যান মোস্তফা বলেন, আপনি অভিযোগ করেছেন কিনা। দোকানদার উত্তরে বলেন, পাশের দোকানদার অভিযোগ করেছে তাই আমি করিনি। লাইনম্যান মোস্তফা বলে আপনি পুনরায় অভিযোগ করেন। তাহলে আমরা এসে লাইন ঠিক করে দেব।

পিডিবির লাইনম্যান মোস্তফা ভূইয়া আরো বলেন, খুটিতে মুই লাগাইলেই ২০০শ’ টাকা দিতে হয়। কাঁধে করে দূরে মই নিয়ে গেলে ৫০০ শত টাকা দিতে হয়। এটা বলতে হয় না, এটা সবারই জানা আছে। এই বলে মোস্তফা সরকারি গাড়ির তৈল পুড়িয়ে গ্রাহককে শক্ত কথা বলে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।

ফলে বাধ্য হয়ে পিডিবির লাইনম্যান ছাড়াই পাড়া-মহল্লার স্বঘোষিত অবৈধ লাইনম্যানদের ডেকে এনে টাকার বিনিময়ে সমস্যা সমাধান করতে হচ্ছে। এটা এখন চাঁদপুর শহরের একটা নিয়মিত চিত্র। পিডিবির লাইনম্যান ছাড়া অন্য কারও পিডিবির গ্রাহকের লাইনে হাত দেয়ার সুযোগ না থাকলেও এটা এখন অহরহই ঘটছে।

তারা পিডিবির কোনো কর্মী না হলেও তাদের রয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ওঠার লম্বা মই। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে এরা ছড়িয়ে থাকে। বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা হলেই ঝুঁকি নিয়ে দুইশ’ বা পাঁচশত টাকার বিনিময়ে স্বঘোষিত এ সব অবৈধ লাইনম্যান গ্রাহকসেবা দিয়ে থাকে ত্বড়িত গতিতে। এসব স্বঘোষিত লাইনম্যানদের অস্তিত্বের কথা বিদ্যুৎ বিভাগ স্বীকার না করলেও পুরো শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

শহরের দক্ষিণ গুনরাজদী পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ডের সড়কসহ প্রায় ১২টি এলাকার ভুক্তভোগী একাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক অভিযোগ করে জানান, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে প্রথমেই শরণাপন্ন হতে হয় নতুন বাজার বিদ্যুৎ বিভাগের জরুরি বিভাগের ল্যান্ডফোনের নাম্বারে অথবা অন্য মোবাইল নম্বরে। কিন্তু বেশির ভাগ সময় ওই নাম্বারে কাউকে পাওয়া যায় না বা ফোন রিসিভ করে না। আগের দিন অভিযোগ দিলে পরে দিন তারা আসেন লাইন ঠিক করতে। ফলে গ্রাহক বাধ্য হয় ওই সব লাইনম্যানদের শরণাপন্ন হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের স্বঘোষিত লাইনম্যানের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন।

ভুক্তভোগীরা জানান, কেউ যদি অভিযোগ কেন্দ্রের ফোনে কাউকে পেয়ে অভিযোগ লেখাতে পারে তবে তার সংযোগটি কখন ঠিক হবে তা বলতে পারে না অভিযোগ গ্রহণকারী। কারণ প্রায় ৬৭ হাজার গ্রাহকের জন্য তিন শিফটে কাজ করা ৪০ জন বিদ্যুৎকর্মী, যা গ্রাহকসেবার জন্য যথেষ্ট। বিশেষ করে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের হাত থেকে দ্রুত রক্ষা পেতে বিদ্যুৎ বিভাগের বিনামূল্যের সেবার অপেক্ষা না করে বাধ্য হয়ে ২শ’ অথবা পাঁচশ টাকা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রাহকরা তাদের সংযোগ ঠিক করে নেয়র চেষ্টা করে।

ভুক্তভোগীরা এই বিষয়ে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ চাঁদপুর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ফম/এমএমএ/

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম