জুলুমে সহযোগিতা করাও জুলুম

।। সাআদ তাশফিন।। পৃথিবীতে আপদ-বিপদ ও দুর্যোগ-বিশৃঙ্খলায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো জুলুম। তাই আল্লাহ তাআলা সবাইকে তা থেকে নিষেধ করেছেন। এমনকি আল্লাহ নিজের জন্যও এটিকে হারাম করেছেন। রাসুল (সা.) হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম কোরো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)

কাউকে দুর্বল পেলেই তার ওপর জুলুমের খড়্গ চালিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কারণ অত্যাচারিত ব্যক্তির অন্তরের আকুতি মহান আল্লাহর কাছে খুব দ্রুত পৌঁছে যায়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে তাঁর বান্দাদের জুলুমের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এটি মানুষকে আল্লাহ তাআলার আজাব ও গজবের সম্মুখীন করে এবং মানুষের সফলতার পথকে রুদ্ধ করে দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ২২৭)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৭)

তাই কখনো কোনো অবস্থাতে কারো ওপর জুলুম করা উচিত নয়। এমনকি কোনো জালিমকে জুলুমের কাজে সহযোগিতা করাও উচিত নয়। যারা তা করবে, তাদের সঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এবং তাদের হাউসে কাওসার থেকে বঞ্চিত করা হবে। কাআব ইবনে উজারা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন, ‘হে কাআব ইবনে উজরা, আমার পরে যেসব নেতার উদয় হবে আমি তাদের (অনিষ্ট) থেকে তোমার জন্য আল্লাহ তাআলার সহায়তা প্রার্থনা করি। যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (সান্নিধ্য লাভ করল), তাদের মিথ্যাকে সত্য বলল এবং তাদের স্বৈরাচার ও জুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করল, আমার সঙ্গে ওই ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক নেই এবং এ ব্যক্তির সঙ্গে আমারও কোনো সংস্রব নেই। ওই ব্যক্তি ‘কাওসার’ নামক হাউসের ধারে আমার কাছে আসতে পারবে না। অন্যদিকে যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (তাদের কোনো পদ গ্রহণ করল) কিন্তু তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে মানল না এবং তাদের স্বৈরাচার ও জুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করল না, আমার সঙ্গে এ ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে এবং এ ব্যক্তির সঙ্গে আমারও সম্পর্ক রয়েছে। শিগগিরই সে ‘কাওসার’ নামক হাউসের কাছে আমার সঙ্গে দেখা করবে। হে কাআব ইবনে উজরা, নামাজ হলো (মুক্তির) সনদ, রোজা হলো মজবুত ঢাল (জাহান্নামের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক) এবং সদকা (জাকাত বা দান-খায়রাত) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৬১৪)

নাউজুবিল্লাহ, যার সুপারিশ ছাড়া কিয়ামতের মাঠে গোটা মানব জাতি অসহায় হয়ে পড়বে, সেই নবী (সা.) যদি কারো সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন, তাহলে তার চেয়ে পোড়া কপাল আর কে হতে পারে? অতএব দুনিয়ার হীন স্বার্থে জালিমের অসংলগ্ন কাজকে সমর্থন ও উৎসাহ দেওয়া থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। তাদের থেকে সর্বদা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারণ জুলুমে সহযোগিতা করাও জঘন্য গুনাহ। মহান আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।

ফম/এমএমএ/

ফোকাস মোহনা.কম