চাঁদপুর: চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ঈশানবালায় মেঘনা নদীতে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের আল বাখেরাহ নামের সারবাহী একটি জাহাজের সাতজনকে হত্যার জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার ও প্রত্যেক পরিবারকে বিশ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারকে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে নৌযান শ্রমিকরা।
এ সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা না হলে ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে সারাদেশের নৌপথ বন্ধ ঘোষণা করা বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশনের কার্যকরী সদস্য ও ঢাকা-চাঁদপুর লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চাঁদপুরের নৌযান শ্রমিকরা লঞ্চঘাট এলাকায় বিক্ষোভ করে।
মেঘনা নদীতে জাহাজের চালকসহ সাতজনকে হত্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হারুনুর রশিদ বলেন, আমাদের সাতজন সহকর্মী মারা গেছেন আরও একজন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। এ ঘটনায় আমাদের সহকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট আবেদন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বাকী লোকগুলোকে বের করতে হবে। মৃত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০ লাখ টাকা সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। আর সন্ত্রাসীদেরকে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যেতে চাই না। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী আজ সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হচ্ছে, এটি হতে থাকবে। পাশাপাশি আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে সরকার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নৌপথ বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
এদিকে চাঁদপুর নৌথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএমএস ইকবাল বলেন, এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি আমাদের সহনুভুতি থাকবে। ময়নাতদন্ত শেষে আজই মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তারা মামলা করতে পারবেন। তাদেরকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। নৌপথে সবধরনের টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য সকল সংস্থা কাজ করছে। আশাকরি, খুব শীঘ্রই আমরা রহস্য উদঘাটন করতে পারবো। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
এর আগে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ওই ইউনিয়নের মাঝের চর নামক স্থান আল বাখেরাহ জাহাজ থেকে নিহতদের মরদেহ ও আহতদের উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। নিহতরা হলেন : জাহাজের মাষ্টার ফরিদপুরের কোতয়ালী থানার গোলাম কিবরিয়া (৬৫), ইঞ্জিন চালক নড়াইলের লোহাগড়া থানার সালাউদ্দিন (৪০), সুকানি আমিনুল মুন্সি (৪১), গ্রীজার ফরিদপুরের কোতয়ালীর শেখ সবুজ (২৭), মাজেদুল ইসলাম (২০), সজিবুল ইসলাম (২৮) ও রানা (২৭)। আর আহত ব্যাক্তি হলেন-জুয়েল। হতাহত ব্যাক্তিদের বাড়ি নড়াইল ও ফরিদপুর জেলায়।
হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ঘটনাটি ঘটেছে গত রাত একটা থেকে দুইটার দিকে। আমরা দুপুর ২টার দিকে খবর পেয়েছি। এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রত্যেকের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতদের নিজ নিজ কক্ষে ডেড বডিগুলো পেয়েছি। তিনজকে মুমূর্ষ অবস্থা উদ্ধার করে চাঁদপুরের হাসপাতালে আনা হলে আরও দুইজন মারা যান।
তিনি বলেন, জাহাজের মালিকপক্ষ আসলে আমরা কিছু বিষয় জানতে পারবো। জাহাজে থাকা কোন মালামাল কেউ নিয়ে যায়নি। যাদেরকে ডাকাত বলা হচ্ছে, আমার মনে হচ্ছে- এটি ডাকাতি না। কারণ, জাহাজে কয়েক কোটি টাকার সার ছিল। সেগুলো সব আনটার্চ অবস্থায় ছিল। বর্তমানে সেগুলো পুলিশের পাহারাধীন রয়েছে। নিহতদের মোবাইলগুলো আমরা পেয়েছি। অপরাধীরা কিছু নিয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। খুনিদের অন্য কোন টার্গেট ছিল হয়তো। তদন্ত সাপেক্ষে সেটি বলা যাবে। আপাতদৃষ্টিতে বলা যায়, এটি ডাকাতির ঘটনা না। ডাকাতির ঘটনা হলে এ জাতীয় কার্গো জাহাজে যারা থাকে তারা সবাই কর্মচারী। তাদের কাছে সর্বসাকূল্যে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকাও থাকে না। শুধু তাদের পথ খরচ থাকে। ডাকাতদল যদি তাদের অ্যাটাক করে চাইলেইতো তা দিয়ে দেয়। কারণ, সামান্য কিছুর জন্য কেউ জীবনের ঝুঁকি নিবে না। ঝুঁকি নিলেওতো অন্য কোথাও আঘাত থাকবে। কাউকে মেরে ফেলতে চাইলে সেতো বাঁচতে চাইবে। কিন্তু সবারই মরদেহ নিজ নিজ রুমে এবং নিহতদের সবার মাথায় আঘাত করা, অন্য কোথাও আঘাত দেখা যায়নি। একজনের ছিল গলায় আঘাত করা।
তিনি জানান, কোস্টগার্ড, সিআইডি, পিবিআই সহ সকল টিম কাজ করছে। ফরেনসিকের জন্য যেগুলো সংগ্রহ করা দরকার সব সংগ্রহ করেছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ফম/এমএমএ/