চাঁদপুর: বাংলাদেশ জাতীয় অনুর্ধ্ব ১৬ ফুটবল দলের হয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ খেলে এসেছেন চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী এলাকার ফুটবলার আবু রায়হান শাওন। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলটি ২৩ জন ফুটবলার , কোচ ও কর্মকতা সহ গত ৩০ আগষ্ট ভুটানের উদ্দেশ্যে রওয়ান দিয়েছিলেন। সেই মুল দলেই ছিলেন বয়সভিত্তিক জাতীয় ফুটবল দলে প্রথমবারের মতো ইলিশ নগরী চাঁদপুর জেলার হয়ে সুযোগ পাওয়া সকলের পরিচিত মুখ শাওন। সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ ফুটবলের ফাইনালে ভুটানের চ্যাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে শক্তিশালি ভারতের সাথে মুল একাদশের হয়েই মাঠে নেমেছিলেন।
ফাইনাল খেলা শেষে ১১ ই সেপ্টেম্বর দেশে এসে পৌছলেও ( ছুটিতে ) নিজ জন্মভুমি চাঁদপুরে ওইদিনই চলে আসেন। আগামী ৫ই অক্টোবর পুনরায় ফুটবল ক্যাম্পে গিয়ে যোগ দিবেন শাওন। দলের হয়ে স্ট্রপার পজিশনে খেলা এই ফুটবলার মনে করেন যত বেশি অনুশীলণ করা যাবে এবং খেলাধুলার সাথে জড়িত থাকা যাবে তাহলেই খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে এবং জাতীয় পর্যায় সহ ফুটবলের বড় বড় আসরে খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে।
চাঁদপুরে আসার পর রোববার ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধায় এই ফুটবলারের সাথে অ্যাডঃ সেলিম আকবরের চেম্বারে ক্রীড়াকন্ঠের প্রতিবেদকের সাথে খেলাধুলা নিয়ে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে তিনি শুরুতেই বলেন আমার সৃষ্টিকতা মহান আল্লাহতায়ালার রহমতে এবং আমার বাবা-মা, আত্বীয় স্বজন, ফুটবলের কোচ, এলাকার মুরব্বীদের দোয়া ও সমর্থনেই আমি লাল-সবুজের জার্সি গায়ে দেশের বাহিরে ফুটবল খেলার সুযোগ পেয়েছি। দেশের পক্ষ হয়ে বিদেশের মাটিতে প্রতিনিধ্বিত্ব করতে পেরে ভালো লেগেছে। আমি বাংলাদেশ দলের হয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে সেমিফাইনালে পাকিস্তান ও ফাইনালে ভারতের সাথে ম্যাচের পুরো সময়টুকুই মুল একাদশের হয়ে মাঠে খেলেছি। আমাদের দলটি যদি সাফ চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে ভারতের সাথে জয়ী হতে পারতাম এবং চ্যাম্পিয়ন হতে পারতাম তাহলে অনেক আনন্দ লাগতো ।জাতীয় পর্যায়ে ভালো ফুটবল উপহার দেয়াই হচ্ছে আমার চেষ্টা। জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলাটাই হচ্ছে আমার মূল লক্ষ্য। আমি নিয়মিত ফুটবলের সাথে জড়িত থাকার পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলা করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, আমার জেলা ইলিশ নগরী চাঁদপুর জেলা। এ জেলা থেকে আমার ও জন্মের আগে বিশেষ করে ১৯৮০ সালের দিকে বাংলাদেশের ফুটবলের কথা বললেই চাঁদপুর জেলার অনেক ফুটবলারের নাম চলে আসতো। ফুটবল বলতেই ওই সময়ে আমার জেলা চাঁদপুরকে সহজেই চিনতো। ওই সময়ের আবুল, মুকুল সহ অনেকেরই নাম শুনেছি। পরবর্তীতে মনোয়ার চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন মানিক, জাহাঙ্গীর গাজী, গোলাম মোস্তফা বাবু, জাহাঙ্গীর পাটওয়ারী, ইউসুফ বকাউল সহ অনেকেই ঢাকার মাঠে এবং দেশের লাল-সবুজ দলের হয়ে খেলেছেন। এরপর জাতীয় দলের হয়ে ফুটবলে রেজা ভাই ও রাফি ভাই খেলেছেন। আমিও তাদের মতো জাতীয় ফুটবল দল সহ ঢাকার বিভিন্ন বড়বড় ক্লাবে নিয়মিত ফুটবলার হিসেবে খেলতে চাই।
চাঁদপুরের ফুটবল উন্নয়ন এবং খেলোয়াড়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেণ, এই জেলাতে মাঝে মাঝে ফুটবল লীগ ও জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ছাড়া তেমন কোন বড়ধরনের টুর্নামেন্ট হয়না। আর ওইখানে বড় বড় এবং বিশেষ করে বয়সী খেলোয়াড় ছাড়া কেই সুযোগ পায়না। আমার মতে দলের জন্য নয় খেলোয়াড় সৃষ্টি করার জন্য জেলা পর্যায়ের খেলাগুলোতে বহিরাগত ফুটবলারের সংখা কমিয়ে স্থানীয় ফুটবলারদেও প্রাধান্য দেয়া উচিত। আমরা যারা ছোট তারা কিন্তু আর তখন খেলার সুযোগ পাইনা। এই ক্ষেত্রে আমাদেও চাঁদপুরের যে সমস্ত সাবেক ফুটবলারগন কোচ হিসেবে আমাদেরকে অনেকটা বিনা পারিশ্রামিকভাবে আমাদেরকে যে অনুশীলণ করায়। তারা ও সাবেক ফুটবলারগন যদি আমাদেও মতো ছোট বয়সী ফুটবলারদেরকে ঢাকা কিংবা আরো ভালো কোন স্থানে অল্পবয়স থেকেই খেলার সুযোগ করে দেয় তাহলে আমার মতো অনেক কমবয়সী ফুটবলারগন জাতীয় পর্যায়ের বয়সভিত্তিক দলে খেলার সুযোগ পাবে। আমার গর্ভধারিনী মা আমাকে ফুটবল অনুশীলনের জন্য চাঁদপুর সোনালী অতীত ক্লাবে এনে ভর্তি করিয়ে দেয়। আমাকে এই ক্লাবের কর্মকতা ও শ্রদ্ধাভাজন সাবেক ফুটবলার মনোয়ার চৌধুরী, মানিক ও জাহাঙ্গীর গাজীদেও অনুপ্রেরনায়ই আমি ঢাকাতে ক্যাম্পে যাওয়ার সুযোগ পাই। ঢাকা এলিট ক্লাব থেকে ট্রায়ালের ফরম আসার পর সোনালী অতীত ক্লাবের কর্মকতারাই আমাকে সহ আরেক ফুটবলার সিমরানকে ঢাকাতে ট্রায়ালের জন্য পাঠায়। আমি দলে সুযোগ পাওয়ার আগে ৯মাস নিয়মিত দলের সাথে অনুশীলণ করেছি। পরবর্তীতে দলের ভালো পারফরমেন্সের কারনেই দলের ২৩ সদস্যসের মুল দলে সুযোগ পাই।
ভুটানে বাংলাদেশ দলের ৪টি ম্যাচ হয়েছে এ নিয়ে জানতে চাইলে আবু রায়হান শাওন বলেন আমি প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার খেলায় শেষ সময়ের কয়েকমিনিট আগে মাঠে নামার সুযোগ পাই। দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের সাথে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে খেলতে নামি এবং সেমিফাইনালে পাকিস্তানের সাথে ও ফাইনালে পুনরায় ভারতের সাথে খেলায় মুল একাদশের হয়ে মাঠে নামি। আমাদের জাতীয় দলের কোচ, কর্মকতা সহ সকলের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরনা পেয়েছি খেলার সময়েই। এছাড়া দলের সকল খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলো খেলাধুলা সহ অনেক আন্তরিকতা।
এবারের সাউথ এশিয়া ফুটবল কনফেডারেশন ( সাফ ) চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নেয় বাংলাদেশ সহ ৭টি দেশ। সাফ চ্যাম্পিয়নশীপের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয় ।সর্বশেষ ২০১৫ সালের আসওে শিরোপা জিতেছিলো বাংলাদেশ।
সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব ১৬ ফুটবল দলের হয়ে খেলে আসা আবু রায়হান শাওনের বাড়ি চাঁদপুর সদরের তপরপুরচন্ডী এলাকায়। তার বাবার নাম নুরুল ইসলাম গাজী ও মায়ের নাম রহিমা বেগম। ২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। সে এসএসসি পাশ করেছে চাঁদপুর শহরের টেকনিক্যাল গভমেন্ট স্কুল থেকে। বতর্মানে সে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব ১৬ দলের সাথে অনেকদিন ধরেই অনুশীলনে রয়েছেন। তাকে তরপুরচন্ডী এলাকায় ফুটবলার শাওন নামে সকলেই চিনে। সে স্থানীয় একুশে ক্লাবের হয়ে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানেই ফুটবল খেলেছেন। সে এ প্রতিবেদককে আরো জানায় চাঁদপুর সরকারী কলেজে এবার এইচ এসসিতে ভর্তি হবেণ।
চাঁদপুরে হয়ে বাংলাদেশ জাতীয় অনুর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে বিদেশের মাটিতে আবু রায়হান শাওন সুযোগ পাওয়াতে তার পরিবার সহ পুরো এলাকার সকলের মাঝেই ছিলো অনেক আনন্দ।
ফুটবলার আবু রায়হান শাওনের মা রহিমা বেগমের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি জানান, আমার ছেলে দেশের হয়ে বিদেশে খেলে এসেছেন এটা আমাদেও চাঁদপুরের জন্য অনেক গর্বের। আমার ছেলের ফুটবলার হওয়ার পেছনে ফুটবল কোচ মানিক ও জাহাঙ্গীর স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার ছেলে অনেক অভাব অনটনে থেকেও নিয়মিত স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি চাঁদপুর সোনালী অতীত ফুটবল একাডেমীতে অণুশীলন করতেন। এই একাডেমীতে খেলার কারনেই ঢাকায় ফুটবলারদেও বাছাইতে অংশ নিয়েছিলো এবং জাতীয় পর্যায়ে অনুর্ধ্ব ১৬ দলের হয়ে দেশের বাহিরে খেলার সুযোগ পেয়েছে।তবে আমার ২ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ফজলে রাব্বি ও আমার মেয়ের জামাই মোঃ খোরশেদ আলম তাকে খেলাধুলার ব্যাপাওে অনেক সহযোগিতা কওে যাচ্চে। তার বড় ভাই তার ফুটবল খেলার জন্য সবসময়ই সহযোগিতা করেছেন। আমি দোয়া করি আমার ছেলে যেনো ভবিষ্যতে জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
আবু রায়হান শাওনের চাঁদপুরের ফুটবল কোচ আনোয়ার হোসেন মানিক ও জাহাঙ্গীর গাজী এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, শাওনের মা’ই আমাদেও একাডেমীতে তাকে ভর্তি করিয়ে দেয়। তাকে ভর্তি করিয়ে দেয়ার পর আমরা দুজন মিলে তাকে খেলার জন্য বুট সহ সকল কিছু দিয়েই সহযোগিতা করেছি। তাকে ঢাকায় খেলানোর ব্যাপাওে আমাদেও সকল ধরনের সহযোগিতা ছিলো। ও যে বিদেশের মাটিতে বিশেষ কওে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপের সেমিফাইনালে ও ফাইনালে সে একজন স্ট্রপার হিসেবে ভালো খেলাই উপহার দিয়েছে। তার ভবিষ্যতের জন্য আমরা জেলাবাসাীর কাছে দোয়া চাই।
আবু রায়হান শাওনের একমাত্র বোন নুরুননাহার আক্তার এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন আমার বাবা, মা ও বড় ভাই সহ আমার স্বামী আমার ভাইয়ের ফুটবল খেলার জন্য অনেক কষ্ট করেছে এবং এখনো সহযোগিতা কওে যাচ্চেন এবং আগামীতে ও এই ধারাবাহিকতা থাকবে। আমার ভাই আগামীতে জাতীয় পর্যায়ে যেনো খেলার সুযোগ পায় জাতীয় দলের হয়ে আমরা তার হয়ে সকলের কাছে এই দোয়াই চাই।
তরপুরচন্ডী এলাকার সন্তান ও চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী ও একুশে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ও ক্রীড়াবিদ অ্যাডঃ আব্দুল হান্নান কাজীর সাথে এ প্রতিবেদককের আলাপকালে তিনি জানান, শাওন ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি অনেক আগ্রহ রয়েছে। সে আমাদেও ক্লাবের হয়ে অনেক স্থানেই ফুটবল খেলেছে। সে যে আমাদের সাথে খেলার পর এবং নিয়মিত ফুটবল একাডেমীতে অনুশীলন করার কারনে ঢাকাতে ৯মাস অনুশীলণ করার সুযোগ পেয়েছে এটা আমরা গর্ববোধ করি। সে ছোটকাল থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি অনেক আগ্রহ।সে যেনো ভবিষ্যতে লাল-সবুজের দেশ বাংলাদেশর হয়ে আরো ভালো খেলতে পারে এবং ফুটবলে ক্রীড়ামোদী দর্শকদেও খেলাধুলাতে আনন্দ দিতে পারে এ জন্য সকলের কাছে শাওনের জন্য দোয়া কামনা করছি।
ফম/এমএমএ/চৌইই/