ছেলের কথা মনে হলেই ঢুকরে কেঁদে উঠেন শতোর্ধা জুলেখা বেগম

পিলখানা হত্যাকান্ডের ১৩ বছর

লেঃ কর্ণেল দেলোয়ার  এর মা। ছবি: ফোকাস মোহনা.কম।

শাহরাস্তি (চাঁদপুর): ১১২ বছরের জুলেখা বেগম। পুত্র ও পুত্রবধু হারানোর দুঃসহ স্মৃতি ও বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত যিনি। বার্ধক্যজনিত কারণে মনে রাখতে পারেন না তেমন কিছুই। পরিবারের অন্যদের সহায়তায় চলে নাওয়া-খাওয়া, এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে যাওয়া। স্বামী চলে গেছেন প্রায় দেড় যুগ আগে। জীবন সায়াহ্নে এসে এখনো স্মৃতিতে ডুব দেন আর দেলুর (লেঃ কর্ণেল দেলোয়ার) কথা মনে করে ঢুকরে কেঁদে উঠেন। দু’বছর আগেও জানতে চাইতেন পুত্র ও পুত্রবধুর খুনীদের ফাঁসি হয়েছে কিনা? এখন আর এসব মনে করতে পারেন না, শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন আর নির্বাক অশ্রুপাত করেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী রাতে বিডিআরের কিছু সংখ্যক বিপথগামী জওয়ানের নৃশংসতায় যে ক’জন সেনা কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছিলেন চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ঠাকুর বাজারস্থ নিজমেহার পাটোয়ারি বাড়ির লেঃ কর্ণেল (অবঃ) দেলোয়ার হোসেন তাদের একজন। অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তা স্বস্ত্রীক চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন বিডিআর সপ্তাহের দাওয়াতে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে। বিডিআর’র নিহত ডিজি শাকিল আহমদ ছিলেন তাঁর ব্যাচম্যাট ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। বিডিআর বিদ্রোহের সময় শাকিল আহমদের বাসাতেই স্ত্রী রশনী ফাতেমা আক্তার লাভলীসহ ছিলেন তিনি।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় লেঃ কর্নেল (অবঃ) দেলোয়ার হোসেনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পাটোয়ারি বাড়িতে গেলে দেখা যায় তাঁর মা জুলেখা বেগম নির্বাক চেয়ে আছেন। পুত্র ও পুত্রবধুর কথা বলতেই হাউমাউ কেঁদে উঠেন তিনি। বার্ধক্যজনিত ভুলে যাওয়ায় নির্বাক অশ্রুপাত ছাড়া আর তেমন কিছুই বলতে পারেন নি।

নিহতের বড় ভাই হাজী আমীর হোসেন পাটোয়ারী (৮৩) কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, “আজ ১৩ বছর হলো আমার ছোটভাইকে দেখিনা, খুনিরা তাঁর স্ত্রীকেও মাফ করেনি। আমার মা এখনো দেলু দেলু বলে কাঁদেন। নিহত দম্পতির দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে শারমিন ফাইরুজ লেখাপড়া সমাপ্ত করে চট্টগ্রামে স্বামীর সাথে রয়েছেন। ছোট মেয়ে নাজিফা ইসমাম ইংল্যান্ডে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিষ্টনে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন।

স্ত্রী কন্যাদের সাথে লেঃ কর্ণেল দেলোয়ার। ফাইল ছবি।

নিহতের বড় মেয়ে শারমিন ফাইরুজ মুঠোফোনে জানান, “হত্যাকান্ডের সময় আমি লন্ডণ কলেজ অব একাউন্টেন্সিতে সিএ অধ্যয়নরত ছিলাম। আমার ছোট বোন নাজিফা ইশমাম সে সময় চট্টগ্রাম প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। ১০ বছর আগের সে দুর্বিষহ স্মৃতি আজো হৃদয়পটে ভেসে উঠে। মানুষের মা কিংবা বাবা বিদায় নিলে একজন হয়তো পাশে থাকে আমরা এমনই দুর্ভাগা যে দুজনকেই একসাথে হারিয়েছি। আজ সবই আছে শুধু মাথার উপরের সবচেয়ে বড় ছায়া দু’টি হারিয়ে গেছে”। এ হত্যাকান্ডের বিচার প্রসঙ্গে তিনি জানান, “আদালতে মামলা বিচারাধিন, আমার বিশ্বাস আমরা ন্যায় বিচার পাবো”।

প্রসঙ্গত, শাহরাস্তি উপজেলার ঠাকুর বাজারস্থ নিজমেহার পাটোয়ারি বাড়ির মৃতঃ আলতাফ হোসেন পাটোয়ারির কনিষ্ঠ পুত্র লেঃ কর্নেল (অবঃ) দেলোয়ার হোসেন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি একজন কৃতি সেনা কর্মকর্তা ও স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। চাকরি হতে অবসরে গিয়ে চট্রগ্রামে সপরিবারে থাকতেন।

ফম/এমএমএ/ফআ/

লেঃ কর্ণেল দেলোয়ার ও তার স্ত্রী। ছবি: সংগ্রহীত।