ছাত্র আন্দোলনে আহত জহির বাঁচতে চায়

চাঁদপুর: ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট আবুধাবিতে সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন জহির আলম। দুর্ঘটনায় তার মেরুদন্ড, বুক, কোমর ও বাম পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। এর মধ্যে একাধিক অপারেশন করা হয়। কেটে ফেলা হয় ভগ্নাশয় ও ক্লিয়ারের একাংশ এবং রড, স্ক্রু-নাট ও ক্লিপ দিয়ে জোড়া দেওয়া হয় বুক, কোমর ও পায়ের হাড়। সংকটাপন্ন ছিলো তার জীবন। একপ্রকার চিকিৎসক ও পরিবারের লোকজন বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিলেন।

কিন্তু… কথায় আছে ‘রাখে আল্লাহ, মারে কে?’ পাঁচ দিন কোমায় থাকার পর জহির আলমের জ্ঞান ফিরে আসে। দীর্ঘদিন পর কিছুটা সুস্থ হলেন। এর মধ্যে ব্যয় হলো অনেক টাকা। দুবাইয়ে চিকিৎসা করার সামর্থ্য আর নেই। তাই দেশে চলে এলেন। বাবার ভূমি বিক্রি করে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো ওই হাসপাতালের চারজন অধ্যাপকের অধিনে তার চিকিৎসা চলছে।

জহির আলমের চিকিৎসায় গত এক বছরে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। বর্তমানে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই তার পরিবারের। এর মধ্যে অতর্কিত হামলা ও মারধরে আবারও তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে। গত ৪ আগস্ট (রোববার) সকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয় সে। এই পোস্ট তার জীবনে কাল হয়ে আসে।

বলছি, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের উত্তর পাড়া বেপারী বাড়ির ওলিউর রহমানের ছেলে জহির আলমের কথা। ওই ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নুরুন্নবী সোহেল ও ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রাজু তাকে অতর্কিত হামলা ও মারধর করে। ৪ আগস্ট, রোববার সকালে ইউনিয়নের আতিক শাহ মাজার গেইটের সামনে এ হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে বলে জানায় জহির।

এরপর পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতাল প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজধানীর ওই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখা যায়, তার শরীরে থাকা রড, স্ক্রু-নাট ও ক্লিপ গুলোর জোড়া হালকা হয়ে গেছে। এতে সে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। কিন্তু চিকিৎসা করার মতো আর্থিক সক্ষমতা নেই তার পরিবারের। একথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জহির আলম।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা এবং তার উপর হামলা ও মারধরের বিষয়টি হাজীগঞ্জে কর্মরত সংবাদকর্মীদের কাছে তুলে ধরেন এবং সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাকে চিকিৎসা সহযোগিতা এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান জহির আলম।

তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করে গত ৪ আগস্ট রোববার সকালে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুকে একটি পোস্ট দেই। ওই পোস্টে উল্লেখ করি, ‘দিন বদলের ডাক এসেছে, সব সাথীদের খবর দে’, ‘ছাত্র-জনতা এক হয়ে, স্বৈরাচারের কবর দে’। এর কিছুক্ষন পর আমি দোকানের সামনে নাস্তা খেতে যাই। এসময় যুবলীগ নেতা নুরুন্নবী সোহেল ও ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রাজু আমার উপর অতির্কিত হামলা ও মারধর করে।

তিনি বলেন, ওই হামলা ও মারধরে আমি গুরুতর আহত হই। এখন চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই। আমি আপনাদের (সংবাদকর্মী) মাধ্যমে সরকারের কাছে সোহেল ও রাজুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং আমার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি। আমি বাঁচতে চাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই সময়ে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকার কারণে হামলা ও মারধরের বিষয়টি থানা-পুলিশকে জানাতে পারিনি।

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিম রাজুর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তার মোবাইল নম্বরটি (০১৭৫৫-০৯৬৫৩৫) বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

অপর অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা নুরুন্নবী সোহেল হামলা ও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তাদের সাথে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক এবং সে আমাদের দলীয় লোক। ওই দিন (৪ আগস্ট) তর্ক-বির্তকের এক পর্যায়ে আমি অধিকার খাটিয়ে তাকে একটা চড় মেরেছি। এর বেশি কিছু হয় নাই। এ সময় তার পরিবারের লোকজন এসে তাকে নিয়ে যায়। তর্ক-বিতর্কের সময় তার জেঠাতো ভাই ইউনুছ ও ইউপি সদস্য ফয়েজ মেম্বার উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে নুরুন্নবী সোহেলের সাথে কথা বলার সময় তিনি তার মুঠোফোনটি ইউপি সদস্য ফয়েজ মেম্বার ও জহির আলমের জেঠাতো ভাই ইউনুছকে দেন। এসময় তারা যে বক্তব্য দেন, তা সোহেলের বক্তব্যের অনুরূপ।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, অভিযাগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফম/এমএমএ/

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম