এস ডি সুব্রত।। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলা আর বাংলার জনগণকে নিয়ে। ভাবতেন সাধারণ মানুষ কে নিয়ে।আজীবন অসহায় মানুষের পাশে ছিলেন। তাদের দূঃখবেদনা অনুভব করেছিলূ হৃদয়ের গভীর থেকে ।
দেশের মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধের কারণে সাবলীল ভাবে তিনি বলতে পেরেছিলেন ……” আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি,নৌকায় ঘুরেছি, সাইকেলে ঘুরছি,পায়ো হেঁটে বেড়িয়েছি ………………”। আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ যখন সমাজের অধিকাংশ মানুষের মূল লক্ষ্য ছিল তখন তিনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দিকে মনোযোগী না হয়ে নিঃস্ব মানুষের প্রতি গভীর ভালবাসা অনুভব করছিলেন হৃদয় থেকে। বঙ্গবন্ধু মানুষের প্রতি মমত্ববোধের পরিচয় পাই তার ছাত্র জীবন থেকেই। কখনো পিতার গোলার ধান দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন, কখনো স্কুলের বই ছাতা কাপড় বিলিয়ে দিতেন অসহায়দের মাঝে।নিজের খাবার ভাগ করে খেতেন বন্ধুদের সাথে। বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে যখন বড় হতে থাকলেন তখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে থাকলেন।ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে শুরু করলেন। দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ পাই তার উক্তি থেকে। ঘর সংসার স্ত্রী কন্যা পুত্রের বাঁধন তাকে বেঁধে রাখতে পারেনি সংসারে। তিনি বলতেন…….” আমার আত্মীয় স্বজনের চাইতেও আমার ভালবাসা বেশী আমার দেশের জন্য। আমার যা কিছু দূঃখভোগ সেতো আমার দেশের জন্য।” নিজের জীবনের স্বর্ণালী সময় কাটিয়েছেন জেলের ভিতর কিন্ত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি কখনো।তার জীবনের স্বপ্ন ছিল একটাই….. এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। বাঙালির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে উপলব্ধি করতে পেরে ই বলেছিলেন……..” এই উপমহাদেশে স্বাধীনতার আগে থেকে বাঙালির বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের শুরু তার সমাপ্তি এখনো ঘটেনি।” বাংলা ভাষার প্রতি তার আবেগ ও অনুভূতি পাওয়া যায় তার কথায়।….” বাঙালি জাতি কে মুছে ফেলার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে।’
মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুলাখ মা বোনের ইজ্জত দেয়ার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন……..” দেশের স্বাধীনতার জন্য এত রক্ত ও মা বোনের ইজ্জত বিশ্বের অন্য কোন দেশে দিতে হইয়াছে কিনা আমার জানা নেই।”
দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম কে তিনি মহৎ কাজ বলেই ভাবতেন। ………..” মজলুম দেশবাসীর বাঁচার দাবির জন্য সংগ্রাম করার চেয়ে মহৎ কাজ কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।”
বঙ্গবন্ধু ক্ষমতার প্রত্যাশী ছিলেন না। তিনি ছিলেন দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থরক্ষার অন্যতম হাতিয়ার। তাইতো তার কন্ঠে শুনতে পাই……..” ক্ষমতার প্রত্যাশী আমি নই, তবে শক্তির প্রত্যাশী আমি বটে।কায়েমী স্বার্থ সম্পন্ন মহলের হাত থেকে দেশবাসীর স্বার্থ ছিনিয়ে আনার শক্তি আমার চাই ই চাই ।সে শক্তি যোগাতে পারে কেবল জণগন।”
নিজের সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি কত অগাধ টান ছিল তা তার উক্তি থেকে বুঝা যায়।…..” যে সংস্কৃতি র সাথে দেশের মাটির সম্পর্ক নেই ,যে সাহিত্য দেশের অবহেলিত লাঞ্ছিত মানুষের কথা বলে না সে সংস্কৃতি ও সাহিত্য চিরস্থায়ী হতে পারে না।” মৃত্যু টা ছিল তার কাছে দেশপ্রেমের চেয়ে নগন্য । মৃত্যু কি তিনি কখনো ভয় পেতেন না। তাইতো তিনি বলতে পেরেছিলেন……….. ” ফাঁসি র মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ , বাংলা আমার ভাষা।” বঙ্গবন্ধু কখনো লোভী ছিলেন না ।তার কথা থেকে সহজেই তা অনুধাবন করা যায়।” একদিকে আমার প্রধানমন্ত্রী র সিংহাসন আর অন্যদিকে আমার ফাঁসির ঘর । আমি বাংলার জণগনের মাথা নত হতে দিতে পারি না বলেই ফাঁসির কাস্ট বেছে নিয়েছিলাম।”
বঙ্গবন্ধু চিন্তায় মননে ছিল অসাম্প্রদায়িক । তাইতো তার কন্ঠে ধ্বনিত হতে শুণি ” বাংলায় মাটিতে সাম্প্রদায়িকতা র কোন স্থান নেই , মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান বাংলাদেশে যারা বসবাস করেন তারা সকলেই এদেশের নাগরিক। সকল ক্ষেত্রে তারা সম অধিকার ভোগ করবেন।” তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতেন …..” ক্ষুধিত মানুষের খাদ্য যারা কেড়ে নেয় তারা মানুষ না। মানুষ রুপি পশু। আপনার আমার উপর আস্থা রাখতে পারেন । আমি এই নরপশুদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে চাই ।” ঘুষখোর ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন……..” জনগণের দূর্দশাকে পূজি করে যারা মুনাফা লোটে , সে-ই ঘুষখোর দুর্নীতি বাজ মজুমদার ও চোরাকারবারিদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। ” তিনি আরো বলতেন…….” কারপশান আমার বাংলার কৃষক করে না, কারপশান বাংলার মজদুর করে না।কারপশান করে আমার শিক্ষিত সমাজ।” স্বাধীনতা র পর স্বাধীনতা সম্পর্কে তার মনোভাব ছিল এরকম ………” আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি । একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এই স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেবে না। বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ই বেঁচে থাকবে। বাংলা কে দাবিয়ে রাখতে পারে এমন কোনো শক্তি নেই। ” লাখো শহীদের আত্মা ত্যাগের কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন ……” যে শহীদেরা আমাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা দিয়ে গেছে তাদের মৃত্যু নেই । তাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশের মানুষ যারা তারা যখন পেট ভরে খেতে পারবে ।পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন তখনই শুধু এই লাখো শহীদের আত্মা তৃপ্তি পাবে।”রাজনীতি মুক্তি র পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য। তিনি বলতেন….- ” রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায় যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে ।” বঙ্গবন্ধুর অগাধ দেশপ্রেমের প্রমাণ পাই তার আবেগ ঘন উক্তি থেকে…………” পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি দশা থেকে আমি জানতাম তারা আমাকে হত্যা করবে । কিন্তু তাদের কাছে আমার অনুরোধ ছিল, আমার লাশটা যেন বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন। বাংলার পবিত্র মাটি যেন আমি পাই।স্থির প্রতিজ্ঞ ছিলাম তাদের কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে মাথা নত করব না। ” নারী পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার মুখে তাইতো বলতে শোনা যায়…….” সেই দিন বেশি দূরে নয় , যেদিন মহিলারা পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে দেশের কাজে অংশ নিবে। ” জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান সর্বদা বাংলার মানুষের কথা ভাবতেন।……” আমি যদূ বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারি , আমি যদি দেখি বাংলার মানুষ দূঃখী ,আর যদি দেখি বাংলার মানুষ পেটভরে ভাত খায় নাই, তাহলে আমি শান্তি তে মরতে পারব না। আমার জীবন বৃথা হয়ে যাবে।”
সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু র বক্তব্য ছিল স্পষ্ট। ” রাজনীতি তে যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে,যারা সাম্প্রদায়িক তারা হীন ,নীচ, তাদের অন্তর ছোট। যে মানুষ কে ভালবাসে সে কোনদিন সাম্প্রদায়িক হতে পারে না”।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট, সুনামগঞ্জ।
০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ ।