চাষের আওতায় আসছে চরাঞ্চলে লক্ষাধিক হেক্টর পতিত জমি

চাঁদপুর মেঘনার চর। ফাইল ছবি।

সরকার এবার ফসল উৎপাদন বাড়াতে দেশে চরাঞ্চলের পতিত জমি চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে দেশের চরাঞ্চলে এক লাখ এক হাজার ৮৯২ হেক্টর পতিত জমি রয়েছে। এসব পতিত জমি চাষের আওতায় আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কৃষির যেমন বাণিজ্যিকীকরণ হবে, তেমনি গড়ে উঠবে নারী ও তরুণ উদ্যোক্তা।

এ লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশের চর এলাকার উপযোগী আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৮ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)।

প্রকল্প প্রস্তাবনা সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। কমিশন যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। অনুমোদনের পর ছয় বছর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে প্রকল্পটি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, দেশে প্রায় দুই হাজার ২২৫ বর্গকিলোমিটার চরাঞ্চল রয়েছে। যেখানে দেড় মিলিয়ন বা ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। এই বিশাল চরাঞ্চলের প্রায় ৬৭ শতাংশ উত্তরাঞ্চলে, যা প্রায় দেড় হাজার বর্গকিলোমিটার। এ চরাঞ্চলে ফসল ফলিয়ে চরের মানুষের ভাগ্য বদলাতে প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। এছাড়া পতিত জমি ব্যবহারও জরুরী।

অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, চরাঞ্চলে ফসল ফললেও সেটা কাক্সিক্ষত মাত্রায় হয় না। এর কারণ কৃষকরা প্রচলিত ও আদি কৃষিপদ্ধতি অনুসরণ করছেন। সেখানে ভাল বীজের অভাব যেমন আছে, তেমনি নেই কৃষি বিকেন্দ্রীকরণের কোন পদ্ধতি।

তবে উন্নত বীজ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে চাষাবাদ করে ফলন বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে শস্যের নিবিড়তা বাড়িয়ে কৃষকের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের চরাঞ্চলে এক লাখ এক হাজার ৮৯২ হেক্টর পতিত জমি রয়েছে। এসব জমির শস্য নিবিড়তা ১৪০ শতাংশ (কোন জমিতে এক ফসল হলে সেটির শস্য নিবিড়তা শতভাগ ধরা হয়, সে হিসেবে ১৪০ শতাংশ শস্য নিবিড়তার অর্থ ওই জমিতে এক ফসল এবং আরেক ফসলের অর্ধেকের মতো ফলে)।

এসব পতিত জমি চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি, ফসলের উন্নত জাত ও কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে এসব এলাকার শস্য নিবিড়তা বাড়বে আরও ৫ শতাংশ। সে লক্ষ্যে পতিত জমি ব্যবহারের জন্য চার হাজার ২৮১টি সোলার প্যানেলযুক্ত (সৌরশক্তিচালিত) আলোক ফাঁদ, চার হাজার ২৮১টি এলএনপি (লো লিফট পাম্প) বিতরণ করা হবে। চরে ১২১টি বিশাল শেড, ১২১টি সাবমার্সিবল পাম্প ও ১২১টি সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়নসহ নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে রয়েছে চার হাজার ২৮১টি ব্যাচে কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন; চারা উৎপাদন ও পানির হাউসে সবজি উৎপাদনকারী কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন এবং এক হাজার ২১০টি মাঠ দিবস, ৪১১টি কৃষিমেলা, ৩০টি সেমিনার ও ৩৬০টি উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণের আয়োজন। এই প্রকল্পের আওতায় ৮৮ হাজার ১৮১টি কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী হবে। এতে নানা ধরনের কৃষিপণ্য প্রদর্শিত হবে।-খবর দৈনিক জনকন্ঠ অনলাইন।
ফম/এমএমএ/

ফোকাস মোহনা.কম