চাঁদপুর : চাঁদপুরের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম এখন ৭০০শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তা’ও বিক্রি হচ্ছে গোপনে। প্রকাশ্যে কাঁচা মরিচ ক্রয় করতে চাইলে বিক্রেতার কাছে অপরিচিত হলে মরিচ বিক্রি না করে নাই বলে বিদায় করে দিতে দেখা যাচ্ছে। বিক্রেতার কাছে ক্রেতা পরিচিত হলে প্রশাসনের জরিমানা থেকে বাঁচতে বলা হয় কতটুকু লাগবে। ক্রেতার যতটুকু দরকার সে পরিমান কাঁচা মরিচ অন্যস্থান থেকে এনে দেওয়া হয়। মনে হয় এ মরিচ যেন অবৈধ বস্তু।
চাঁদপুর সদর, হাজিগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিন ও হাইমচর উপজেলার বিভিন্ন হাট ও বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৭০০শ’ টাকা দরে বিক্রি করছে সবজি বিক্রেতারা। যার ফলে এ জেলার নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা তাদের নিত্যদিনের চাহিদা পূরনে কাঁচা মরিচ ক্রয় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রোববার (২ জুলাই) জেলার বিভিন্ন হাট ও বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় কাঁচা মরিচের উৎপাদন কম ও এ বছর বৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচ পচে যাওয়ায় দাম অনেকগুন বেড়েছে।
ঈদকে সামনে রেখে হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে গেছে। এ জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১০০শ’ টাকা দরে। জুনের মাঝামাঝি ছিল ১৬০ টাকা প্রতি কেজি। গত প্রায় ১ সপ্তাহ পূর্বে বাজারের আড়ৎগুলোতে পাইকারী ২০০ টাকা দরে ও খোলা বাজারে খুচরা ২২০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। সেটা এখন লাফিয়ে লাফিয়ে ৯০০ টাকা পর্যন্ত হয়। কিন্তু ভারত থেকে আমদানির খবর শুনে রোববার বিকেল থেকে দাম কমে প্রতি কেজি ৭০০শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের ৩দিন পূর্বে যে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৩৬০ টাকায়। সে মরিচ ঈদের পূর্বের দিন অর্থাৎ বুধবার(২৮ জুন) দিন ভর প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০০শ’টাকায়। সে কাঁচা মরিচই চাঁদরাতে বিক্রি শুরু করেছে ৯০০শ’ টাকায়।
বর্তমানে চাঁদপুরের হাটবাজারে এখন কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০শ’ টাকায়। শহরের প্রধান আড়ৎ ঐতিহ্যবাহী পালবাজার, পুরানবাজার, নতুন বাজার ও উপজেলার হাজিগঞ্জে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ গত বুধবার থেকে রোববার পর্যন্ত পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ৮শ’ ২০ টাকা টাকা দরে।
সে কাঁচা মরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০শ’টাকা দরে। কাঁচা মরিচের দাম অধিক পরিমানে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোন ক্রেতা এখন ১ কেজি বা ৫০০ গ্রাম আধাকেজি ক্রয় করার সাহস পাচ্ছে না। তাই ক্রেতারা এখন ১০০ গ্রাম ৯০ টাকা বা ৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৫০ টাকায় ক্রয় করতে দেখা যায়।
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার মরিচ বিক্রেতা কবির হোসেন জানান, এ বছর বৃষ্টিতে মরিচ গাছের ফুল পড়ে যাওয়ার কারণেই কাঁচা মরিচের উৎপাদন কম হওয়ায় কৃষক তাদের খরচ মিটাতে আমাদেরকাছে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করায়, মরিচের বাজার দর বেশী। একজন কৃষক পাঁচ কেজি কাঁচা মরিচ বাজারে এনে পাইকারদের কাছে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করে। যার কারনে আড়ৎদার ব্যবসা করে বিক্রি করায় খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ ৯০০শ’ টাকা বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
শহরের পালবাজারের ব্যবসায়ী মফিজ হোসেন জানান, এখন মরিচের বাজারে দাম অনেক চড়া। আমরা পাইকারিতে ক্রয় করতে হয় প্রতি কেজি ৮শ টাকা দরে। ঈদের ২দিন আগে ৩৬০ টাকায় কাঁচা মরিচ কিনায় ৪০০শ’ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখন দাম বেড়ে আড়তে ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রি করতে হয় ৯০০শ’ টাকায়। এত দামে বিক্রি করতে পুলিশ এসে জামেলা করবে। যার কারনে কাঁচা মরিচ বিক্রি বন্ধ রেখেছি।
শহরের এক গৃহবধূ শামছুন্নাহার জানান, গত এক মাস আগে ৩ কেজি কাঁচা মরিচ চর এলাকা তারাবুনিয়ার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৮০ টাকা কিনে বেলেন্ডার করে রেখেছি। সে কাঁচা মরিচ দিয়ে তরিতরকারি রান্না করছি। ঈদের ৫-৬দিন পূর্বে পালবাজারের আড়তে দেখলাম প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২০০শ’টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই খুচরা বাজার থেকে আধা কেজি কাঁচা মরিচ ১১০টাকায় কিনেছি। এখন মরিচের প্রয়োজনে মরিচ কিনতে এসে ঈদের আগের দিন কাঁচা মরিচ ৮০০টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি করছে ৯০০শ’ টাকায়। এত দাম দিয়ে আমাদের মত মধ্যবিত্তরা মরিচ ক্রয় করা সম্ববনা।
সদর উপজেলার হরিনা কমলাপুরের কৃষক আব্দুল বারেক হাওলাদার, কিছুদিন আগে রোদের কারণে মরিচের গাছ থেকে ফুল ঝরে পড়েছে। ফলে মরিচ এবার কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। আমি আট কেজি কাঁচা মরিচ পালবাজারে আনার পর প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৮০০শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করি।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহমেদ সিদ্দিককী বলেন, এই মৌসুমে সব সময় মরিচের ঘাটতি বেশী থাকে। তবে এ বছর মরিচের দাম তূলনামূলক বেশী। কৃষক যেখানে কাঁচা মরিচের আবাদ করে সেখানে দাম কম। কিন্তু অন্যা জেলায় যখন সরবরাহ হয় আড়তদার থেকে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে অতিরিক্ত যে মূল্যে এখন মরিচ বিক্রি হচ্ছে, সে দামের মধ্যে যদি কৃষক প্রতি কেজি ৪০০ টাকাও পেত, তাহলে তারা আগামীতে আরো বেশী আবাদ করার জন্য উৎসাহ পেত।
ফম/এমএমএ/