চাঁদপুর: চাঁদপুর সদর উপজেলার ১ নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার জয়নাল হোসেন ডালির ছেলে মনির হোসেন ডালি ও কবির হোসেন ডালি স্কুলছাত্রকে তুলে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গাছের সাথে বেঁধে ব্যাপক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর জখম ও অজ্ঞান অবস্থায় পানিতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় এলাকাবাসী স্কুলছাত্র ফরহাদ হোসেন শান্তকে (১৬) উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা তাতেও ক্ষেন্ত না হয়ে হাসপাতালে এসে পুনরায় স্কুল ছাত্রের বাবা প্রবাসী ফারুক প্রধানিয়ার উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে তাকেও গুরুতর আহত করে। পরে চাঁদপুর সরকারি জানান হাসপাতালে বাবা ও ছেলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
গত সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিষ্ণুপুর ৬নং ওয়ার্ডের প্রবাসী ফারুক প্রধানিয়ার বাড়িতে এই বর্বরোচিত হামলা লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার জয়নাল হোসেন ডালির ছেলে মনির হোসেন ডালি(৪২),কবির হোসেন ডালি (৩৫), এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে অসহায় মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় সহ বিভিন্ন অপকর্ম ঘটাচ্ছে। প্রবাসী ফারুক প্রধানিয়া নয় মাস পূর্বে দেশে এসে ইট,বালুর ব্যবসা শুরু করেন। তারপরে তার দিকে নজর পড়ে এলাকার চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের।
স্কুল ছাত্রের বাবা ফারুক প্রধানিয়ার সাথে স্থানীয় এক ব্যক্তির তর্ক-বিতর্ক হলে সেই ঘটনার মেম্বারের ছেলে মনির ঢালী নিজেই সুবিধা নিতে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রবাসীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। মনিরের কথা না শোনায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে দলবল নিয়ে প্রবাসীর বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়।
এসময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে চাঁদপুর মডেল থানার এএসআই শহিদুলকে খবর দিয়ে এনে পুলিশের ভয় দেখিয়ে আল-আমিন স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ফরহাদ হোসেন শান্তকে কথা শোনার নাম করে বাড়ির পাশের গভীর জঙ্গলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে বেদম মারধর করে। তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে ভেবে তাকে পানিতে ফেলে দিয়ে সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় এলাকাবাসীরা পানি থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে।
এই লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দিয়ে স্কুল ছাত্রের বাবা ফারুক প্রধানীয়া জানান, বিদেশ থেকে দেশে আসার পর থেকে মেম্বারের ছেলে মনির প্রধানিয়া বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চাঁদা নিয়েছে। স্থানীয় এক ব্যক্তির সাথে কথা কাটাকাটির জের ধরে মনির নিজে আর্থিক সুবিধা নিতে বাড়িতে এসে হামলা চালায়। পরবর্তীতে মডেল থানার এএসআই শহিদুলকে খবর দিয়ে এনে তার উপস্থিতিতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়। পুলিশের ভয় দেখিয়ে ছেলেকে তুলে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে। অবশেষে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও সেখানে দ্বিতীয় দফা হামলা চালিয়ে আহত করে। আমরা এই হামলাকারী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই। তারা এলাকার রামরাজত্ব কায়েম করেছে তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। মনির ঢালী রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে।
হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাদল প্রধানীয়া ও আলম জানান, স্কুলছাত্রকে বেদম মারধর করে পানিতে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মনির ঢালী সন্ত্রাসীদের এনে পুনরায় স্কুল ছাত্রীর বাবা ফারুক প্রধানীয়ার উপর হামলা চালিয়ে তাকেও আহত করে।
ঘটনার পরে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীম খান হাসপাতালে এসে হামলার ঘটনা অবগত হয়ে উভয়পক্ষের সাথে কথা বলে ঘটনাটি রফাদফা করার জন্য প্রস্তাব দেয়। স্কুল ছাত্রের মা শাহিদা বেগম জানান, হামলাকারীরা ১৯৭১ সালে রাজাকারদের হামলার ঘটনাকেও হার মানিয়েছে। ঘটনার দিন রাত দেড়টায় পুলিশের ভয় দেখিয়ে শফিকুল ইসলাম প্রধানীয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন প্রধানীয়া স্কুল ছাত্র ফরহাদ হোসেন শান্তকে ডেকে নিয়ে মেম্বারের ছেলে সন্ত্রাসী মনির ও কবির ঢালির হাতে তুলে। তারা ছেলেকে গাছের সাথে বেঁধে বেদম মারধর করে।পরে সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে এসে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি যেকোনো সময় তারা আবারও হামলা ও লুটপাট চালাবে বলে হুমকি দিচ্ছে। তবে এই ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত মনির ডালির মুঠোফোনে বারবার ফোন করলেও সে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ফম/এমএমএ/