চাঁদপুরে সরকারি জলাশয়ে অনুমতি ছাড়া মাছ চাষের অভিযোগ!

চাঁদপুর:  প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক ইঞ্চি জমিও যাতে খালি না থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এমন কথার উপর ভিত্তি করে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৬নং উপাদী দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষকরা নিরলসভাবে কৃষি উৎপাদনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের বড় অংশ ছিল এখানকার তিন একরের উপরের একটি দিঘি। চাঁদপুর সদর উপজেলার অংশে সিএস ৩৩ ও ৩৪ নং দাগে ৮১ শতাংশ সরকারি খাস সম্পত্তি এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার অংশে সিএস ১৩২৩ নং দাগে দুই একর ৬৬ শতাংশের ব্যক্তি মালিকানা দিঘিটি ব্যাপক কাজে আসতো।

জানা যায়, যুগ যুগ ধরে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের টাহরখিল-বিমলেরগাঁও এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৬নং উপাদী দক্ষিণ ইউনিয়নের করবন্দ গ্রামটি ছিল কৃষি নির্ভর একটি এলাকা। এখানকার অধিকাংশ মানুষই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে চলতেন। উক্ত এলাকাগুলোর কৃষি জমিতে চাষ হতো বিভিন্ন ধরনের ফসল। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ব্যাপক ফসলও পাওয়া যেতো প্রতি বছর। কিন্তু দিন দিন যেন হারিয়ে যাচ্ছে ফসল উৎপাদনের অতীতের চিত্র। তার কারন হিসেবে কৃষকরা উল্লেখ করেন, এ বিলের চারদিকে একসময় ছোট বড় কয়েকটি খাল ছিল। পানি নিষ্কাশনের জন্য বেশ উপকারে আসতো। এখন ঐ খালগুলো আস্তে আস্তে ভরাট হয়ে যাওয়ায় কৃষি উৎপাদন করা তেমন একটা সম্ভব হয়নি। বিকল্প উপায় হিসেবে যাও একটি দিঘি ছিল তা সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দিয়েছে ব্যক্তি মালিকরা। পানি নিষ্কাশনের জন্য যে পাইপ রাখা হয়েছে অতি বৃষ্টিতে এ এলাকার চাষকৃত ফসলী জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে এবং কৃষকদের মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

এদিকে উক্ত দিঘিটি চাঁদপুর সদর ও মতলব দক্ষিণের দুই উপজেলার সিএস খতিয়ানে তিন একর ৪৭ শতাংশ হলেও চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের টাহরখিল মৌজায় ৮১ শতাংশের মধ্যে বিএস খতিয়ানে ৩ শতাংশ কমে গিয়ে ৪৫৪ নং দাগে ৭৮ শতাংশ রয়েছে। তাই তিন একর ৪৪ শতাংশের এই দিঘিটি এতবছর খোলা থাকলেও এখন তার পাড় বেঁধে ফেলায় কৃষি জমিগুলো হয়ে যাবে চাষাবাদের অনুপযোগী। চাঁদপুর সদরের ৭৮ শতাংশ সরকারি খাস সম্পত্তি পার্শ্ববর্তী হেলাল বেপারী সরকারের অনুমতি না নিয়েই সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছেন বছরের পর বছর।

উক্ত দিঘির একজন অংশীদার সাবেক নৌ বাহিনীর কর্মকর্তা মোঃ কামাল খান বলেন, আমি এই দিঘিতে ক্রয় সূত্রে ৫৭ শতাংশ জমির মালিক। কিন্তু আমাকে না জানিয়ে অন্যান্য অংশীদাররা সদরের ৮১ শতাংশ খাস জমিসহ পুরো দিঘিটি কয়েক বছরের জন্য পোশানী লাগিয়ে ফেলে। এক সময় ভারি বৃষ্টিতে আশেপাশের চাষকৃত জমিতে পানি জমে থাকার সুযোগ ছিল না। কারন পাশের ছোট ছোট খাল দিয়ে পানি নেমে যেতো। এমনকি এই দিঘির পানি দিয়ে ফসল চাষ হতো। এখন তা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। দিঘির খোলা দক্ষিণ পাড়ে বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে দেয়ায় আশেপাশের কৃষি জমিগুলো হুমকির মুখে পড়ে যাবে।

দিঘির অংশীদার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, আমার ৮১ শতাংশ ও ইউসুফ পাটওয়ারী সাহেবের ১ একর ৩৩ শতাংশ ব্যক্তি মালিকানা অংশটুকুই পোষানী লাগিয়েছি। চাঁদপুর সদরের অংশটুকু পোষানী গ্রহীতা নিজেই শাহমাহমুদপুর ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সম্ভবত লিজ নিয়েছে। সেটা আমি পুরোপুরি অবগত নই।

শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা বিশু দেবনাথ বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। জানার পরেই চাঁদপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসে অবগত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি সম্পত্তি লিজ লাগানোর ক্ষমতা কারো নেই। যদি এমন কিছু করা হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে শাহমাহমুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুর রহমান নান্টু পাটওয়ারী বলেন, ইউনিয়নের মধ্যে যে এ এলাকায় সরকারি খাস জমি আছে তা আগে জানতাম না। এবছরই প্রথম জানলাম। তবে সরকারি খাস সম্পত্তিটি সম্ভবত এসি ল্যান্ড অফিস থেকে অনুমতি আনা হয়েছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ হেদায়েত উল্যাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের সরকারি এ সম্পত্তির কাগজপত্র দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফম/এমএমএ/

সংবাদদাতা | ফোকাস মোহনা.কম