
চাঁদপুর: একই দিনে চাঁদপুরের আদালতে পরপর দুটি হত্যা মামলার রায় প্রদান করেছেন পৃথক দুজন বিচারক।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুপুরে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক বেগম ফরহানা ইয়াসমিন এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-০২-এর বিজ্ঞ বিচারক মো. সাহেদুল করিমের আদালতে এ রায়গুলো ঘোষণা হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানাগেছ, ২০০৮ সালের ৮ জানুয়ারি ১৬২নং ভৈরব চাঁদপুর রেলপথে চলাচলকারী লোকাল ট্রেনে রাত অনুমান সোয়া ১১টায় ছিনতাইকারীরা হাজীগঞ্জ থেকে যাত্রীবেশে উঠে। ট্রেনটি ছাড়ার পর ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্র (চাকু) নিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে বলাখাল আসলে ট্রেন থেকে ৩/৪ যাত্রীকে তারা চলন্ত ট্রেন থেকে ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। তখন ওই যাত্রীদের ডাকচিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেলের হাসপাতালে নিয়ে আসে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় অজ্ঞাত ব্যক্তি মারা যায়। এ ব্যাপারে চাঁদপুর রেলওয়ে থানায় ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-১। যা পরবর্তীতে জি আর মামলা নং-১/২০০৮।
এ হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার আসামি সিরাজুল ইসলাম ও ফারুক মিয়ার বিরুদ্ধে প্যানেল কোর্ট ১৮৬০-এর ৩০২ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় প্রদান করেছেন। অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক বেগম ফরহানা ইয়াসমিন প্যানাল কোট ১৮৬০ এর ৩৯৪ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় প্রদান করেন। এ মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. বদিউজ্জামান কিরন।
অপরদিকে একই দিনে অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২-এর বিজ্ঞ বিচারক মো. সাহেদুল করিম কচুয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় প্রদান করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, কচুয়া উপজেলার করইশ গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে ফখরুল ইসলাম প্রেমের সম্পর্কের কারণে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের কথা গোপন রেখে ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর নোটারী পাবলিকের মাধ্যেমে এফিডেভিডের মাধ্যমে প্রেমিকা রুমা আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের পর ফখরুল তার স্ত্রী রুমাকে তার বাড়িতে তুলে নেয়নি। রুমা তার বাপের বাড়িতে থাকত।
ফখরুল ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর মোবাইলে কল করে দুপুরে রুমার মামাতো বোনের বাড়িতে যেতে বলে। ফখরুলের কথামতো রুমা তার মাকে বলে তার বাড়িতে যায়। সেই থেকে রুমার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় রুমার পরিবার তাকে খুঁজতে থাকে। ফখরুলকে জিজ্ঞেস করলে সে নানা তালবাহার কথা বলে। পরে ৬ নভেম্বর ২০১৩ রুমার পরিবারের পক্ষ থেকে কচুয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়। উপ-পরিদর্শক সাদেকুর রহমান ফখরুলকে আটক করে থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে রুমাকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে।
আসামী ফখরুলের বিরুদ্ধে প্যানাল কোট ১৮৬০ এর ৩০২ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় প্রদান করেছেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি ফখরুল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অপর আসামি সাখায়াত হোসেন ও হাবিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হয়ায় বিজ্ঞ বিচারক তাদেরকে খালাস প্রদান করেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. দেবাশিষ কর মধু। আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. আমান উল্যা ও অ্যাড. মোহাম্মদ মহসীন খান।
ফম/এমএমএ/