চাঁদপুরে পানির অভাবে কৃষক পাটের জাগ দিতে পারছেন না

ফেলে রেখেছেন ক্ষেতেই , আমন বীজ তলাগুলোও বৃষ্টির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে 

চাঁদপুর : বৃষ্টির ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি হচ্ছে না ।আষাঢ় মাস গিয়ে এখন শ্রাবনের ২২ তারিখ চলে যাচ্ছে ।  খাল বিলে পানির স্তর  এখনো তলায় ।পানির অভাবে  পাট কেটে  খালে জাগ দিতে পারছে না পাট-চাষীরা । তাই জেলায় পাটের ফলন ভালো হলেও  কৃষকগন বেশ উদ্বিগ্ন ।তাদের শংকা পাটের সঠিক /ভালো দাম পাবেন না ।  

আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শোয়েব মিয়া বলেন, গত জুলাই মাসে  বৃষ্টির আগাম বার্তা  (ফোরকাষ্ট) ছিলো  চা্ঁদপুরসহ চট্রগ্রাম বিভাগের অন্যান্য জেলায় ৬১০- ৭৯০ মি. মিটার বৃষ্টির । কিন্তু চাঁদপুরে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ২০০ মি. মিটার। আগষ্টে চাঁদপুরসহ পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস ৫০০-৬১০ মি.মিটার বৃষ্টির । দেখা যাক কি হয় ।  ‘আসলে জলবায়ু পরিবতর্ন ও  এখন মৌসুমী বায়ু কম-সক্রিয়, তাই বৃষ্টি হচ্ছে না ‘’ – এমনটাই জানান  তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের কর্মকর্তা  নরেশ চন্দ্র দাশ জানায়  যে, এবার জেলায় ৪হাজার হেক্টরের বেশী এলাকায় পাটের আবাদ হয়। জেলায় সদর, মতলবদক্ষিন , ফরিদগঞ্জ ও কচুয়ায় বেশী পাট চাষ হয়। জেলার অন্যান্য স্থানেও পাট চাষ হয় ।কিন্তু কৃষকগন পাট  জাগ দিতে  পারছেন না পানির অভাবে।  

 এবার বৃষ্টির অভাবে খাল বিলগুলোর পানি এখনো তলায় থাকায় কৃষকগন  ক্ষেতেই  পাট কেটে রেখে দিয়েছেন, ঘুরে ঘুরে এমনটাই দেখা গেলো  সদরের কুমারডুগী, আশিকাটি,  বাবুরহাট, পল্লীবিদ্যুত, মিয়ার বাজার, মহামায়া,  কৃষ্ঞপুর ও আশপাশের এলাকায়।  মতলব, হাজীগঞ্জে ও ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে। 

 সদরের  পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার হানিফ পাটোয়ারী , আনোয়ার হোসেন, শহীদ গাজী, জহিরুল হক বলেন, পাট কেটে অনেক দূরের  খালে জাগ দেয়া সম্ভব না।অনেক খরচ হবে। পাটও বেহাত হতে পারে। তাই  কাটা পাট  নিজেদের ক্ষেতেই ফেলে রেখেছি । বৃষ্টির পানিতে পাশের খালে পানি আসলে  জাগ দিবো।  এমন কথা অন্যরাও জানালেন।

 তারা আরো বলেন, এবার আশা ছিলো বেশী দামে /লাভে পাট বিক্রি করবো । কিন্তু সে আশা বৃথা। এখন বাজারে পাট বিক্রি হচ্ছে ২৫০০-৩০০০/০০  টাকা মণ।

তারা আরো জানান, বৃষ্টির অভাবে আমনধানের বীজতলাগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে ।  

সদরের  কৃষি অফিসার আয়েশা আক্তার জানান, সদরে এবার ১৬০৪ হেক্টরে ভালো পাটের ফলন  হলেও হাজামজা  খালে  ও বিলে  পানি না থাকায়  কৃষককুল হতাশ । এবার আষাঢ়-শ্রাবণেও বৃষ্টিও নাই। পানি উন্নয়ন বোর্ডও হাজামজা খালগুলো সংস্কারের  উদ্যোগ নিচ্ছে না।তা হলে কিছুটা পানির অভাব লাঘব হতো।

একই কথা জানালেন হাজিগঞ্জের কৃষি অফিসার দিলরুবা খানম। তিনি বলেন হাজিগঞ্জেও পাটের ভালো ফলন হয়েছে মোট ৪৫০ হেক্টরে ।   আমার এখন রিবোন রেটিং এর মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। এটা নতুন নিয়ম, তাই কৃষকগন এগিয়ে আসছে না।তারা সবাই আকাশের দিকে তাকাচ্ছে বৃষ্টির জন্য প্রতীক্ষা করছে । আমন ধানের বীজতলা গুলোও নষ্ট হচ্ছে বৃষ্টির পানির অভাবে।  আউশের মিল্কিং টাইম । সেটাও ব্যাহত হচ্ছে বৃষ্টির অভাবে। 

মতলব দক্ষিনের পাটচাষীদের অবস্থাও  একই রকম।  সেখানে প্রায় ৪৫০ হেক্টরে পাট চাষ হয়েছে। উপজেলার দক্ষিন নলুয়া গ্রামে  সড়কের পাশে  কৃষক মা্ন্নান (৫০)কে তার স্ত্রী সহ পাটের আঁশ তুলতে দেখা গেলো। স্ত্রী খুশী বেগম তাকে সাহায্য করছেন । কিন্তু তাদের মেুখে হাসি নেই । আরো পাট কেটে রেখেছেন কিন্তু জাগ দিতে পারছেন না । পানি নেই । দূরের খালে পাটের বোঝা নেয়া সম্ভব না। একই গ্রামের  দুলাল বেপারি ,   বাইশপুরের  রহমতআলী ,   নায়েরগাঁও ইউনিয়নের পাটন গ্রামের মাসুদ মিয়া  জানান, এবার পাটের ভালো ফলন হলেও আমরা আশাহত। পানির অভাবে জাগ দিতে পারছিনা্ । তাই লাভের মুখও দেখবো না ।আমরা হতাশ । বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে দরখাস্ত দিচ্ছি , কান্নাকাটি করছি । গতবার অতি বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি অইছে এইবার আবার বৃষ্টি নাই।দিনে রা্ইতে  আকাশে দেখি মেঘ  আর মেঘ, কিন্তু বৃষ্টি নাই।পাট কাইটা  ক্ষেতের পাশে  রাইখা  দিচি । পাশের খাল বৃষ্টির পানিতে ভইরা গেলে এখানেই পাট জাগ দিমু। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। 

ফরিদগঞ্জেও একই অবস্থা। কৃষকগন হতাশ ।  সেখানে পাট চাষ হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে। পানির অভাবে কৃষকগন পাটে জাগ দিতে পারছেন না। জানালেন, বালিথুবা , গুপ্টী, সুবিদপুর ইউনিয়নের  মোহসীন পাটোয়ারি,   সিরাজ  সরদার, সোলেমান  মিয়া  প্রমুখ ।   উপজেলা কৃষি অফিসার  আশিক জামিল মাহমুদ  জানান, এসব  প্রাকৃতিক কারণে  ফরিদগঞ্জের কৃষকগন পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

প্রসংগত: গতবার বর্ষায় অতিবৃষ্টিতে, জলাবদ্বতায় ও ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ( ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের  কারনে) জেলায় ৫৭ হাজার কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সরকারি হিসেবে মোট ৪৪২ কোট টাকার  বিভিন্ন প্রকারের ফসল ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে  বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবীদ মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন নিশ্চিত করেন ।

ফম/এমএমএ/

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | ফোকাস মোহনা.কম