চাঁদপুর : চাঁদপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি ২০১৮ সালে শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠে তার সাঙ্গপাঙ্গরা। যার ফলে সদরের বহরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে জাল সনদে ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে নিয়োগ পান লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন যুবলীগ সহ-সভাপতি মুহাম্মদ কাউছার খান। ওই বিদ্যালয়ের তৎকালীন সময়ে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন দীপু মনির টাকার মেশিন বালু খেকো চেয়ারম্যান সেলিম খান। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ওই বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়াতে আছেন ওই কাউছার।
ওই বিদ্যালয়ে ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে প্রার্থী ছিলেন এমন একজনের সাথে কথা বললে কাউছার সম্পর্কে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে। তবে তিনি নিজের পরিচয় গোপন রাখার জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, সদর উপজেলায় ১০ নম্বর লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নে সাবেক নাম ‘বহরিয়া নূরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়’ বর্তমান নাম ‘বহরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়’। এ বিদ্যালয়ে ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে অত্র বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন পদে থাকা মুহাম্মদ কাউছার খান (ডিগ্রি পাস) আবেদন করেন। পরবর্তীতে তাকে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর এর মধ্যে উক্ত পদে যোগদান করার জন্য ২৩ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মকবুল হোসেন স্বাক্ষরিত পত্র পাঠানো হয়।
‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে নিয়োগ পাওয়া মুহাম্মদ কাউছার খান ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ ঘটিকায় উক্ত পদে যোগদান করিলাম বলে পত্র প্রদান করলে একইদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষর করে যোগদান গৃহীত হয়েছে বলে পত্র গ্রহন করেন।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে কাগজপত্র উপজেলা, জেলার যেখানে যেখানে পাঠানো দরকার সব জায়গায় পাঠালেও ১ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে যায় কিন্তু কাউছারের এমপিও (ইনডেক্স) হয় না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানতে পারে তা জাল সার্টিফিকেট হওয়ায় ইনডেক্স পড়ে না। দেড় বছরের ও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও ইনডেক্স পড়ে না। পরবর্তীতে ২ বছরের কাছাকাছি সময় শেষ হওয়ার পর চক্রের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে ইনডেক্স পড়ে।
তার জাল সনদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কাউছার বিদ্যালয়ে নিয়োগ পায় ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। তার এমপিও হয়-২০২১ সালের ৮ এপ্রিল। ইএমআইএস পোর্টালে মুহাম্মদ কাউছার খান নামে জাল সনদ দেখায়। তার ইনডেক্স নম্বর: ১০১২৮৩৪৯৫, এমপিও প্রতিষ্ঠান বহরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (০৭০১১৯১৩০১), স্তর মাধ্যমিক, ডকেট নম্বর: ২০২১৪৮১৮১৬-৩৯৬৬, এমপিও কোড: ০৭০১১৯১৩০১।
এই বিদ্যালয়ের একাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী জানান, কাউছার খান ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে চাকরি করলেও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সেলিম খান ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে আছেন। বিদ্যালয়ে যত অনিয়মকে সে নিয়মে পরিনত করেছেন। কোচিং বাণিজ্যসহ নানা নিয়ম করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করতেন। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম খানের হামলা-মামলার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনি।
বিদ্যালয়ের ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদে থাকা মুহাম্মদ কাউছারকে ‘জাল সনদ’ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি সঠিক কোন উত্তর দেননি। তিনি বলেন, আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। সরাসরি কথা বলবো। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি যে পদে আছেন ক্লাস করতে পারেন না। কিভাবে আপনি ক্লাস করেন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্লাস করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে বলেন, আমাকে যুবলীগের পদ দিয়েছে কিন্তু আমি নিতে চাইনি।
এই বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বিদ্যালয়ের তৎকালী প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মুকবুল হোসেন বলেন, ওই সময়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি সেলিম খান ছিলেন প্রভাবশালী। তার নির্দেশে মুহাম্মদ কাউছার খানের নিয়োগ হয়েছে। আমি তার সনদপত্র উপজেলা মাধ্যমিক অফিসে পাঠানোর পরে জানতে পেরেছি সনদপত্র জাল। যে কারণে এসব কাগজপত্র আর কুমিল্লায় পাঠাইনি। পরবর্তীতে কাউছার তার কাগজপত্র তদ্বির করে অন্যদের সহযোগিতা নিয়ে এমপিও করার জন্য পাঠায়। এরপর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। তার বিষয়ে আমার কাছে আর কোন তথ্য নেই।
বহরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ইমান হোসেন বলেন, আমি এই বিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে কাউছার খানের নিয়োগ হয়েছে। এই বিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নেই। তবে তিনি ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার’ পদের হলেও শিক্ষক কম থাকায় ক্লাস নিয়েছেন। এখন আমরা এনটিআরসি থেকে ৩জন শিক্ষক পেয়েছি। তাকে আর ক্লাস করতে হবে না।
কাউছার খানের জাল সনদে নিয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করা হয় চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাণ কৃষ্ণ দেবনাথকে। তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনি। আর এসব নিয়োগ দিয়েছেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ। তারপরেও আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলে আমরা অতি গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
ফম/এমএমএ/