ঘুরে দাঁড়াবেই বাংলাদেশ

বায়ুবিদ্যুতে নতুন আশা

সমস্যা আছে, থাকবেই। এসব মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার নামই জীবন। যে যেখানে থেমে গেলেন, সেখানেই তার জীবনের কাছে চরম পরাজয়। কবি বলেছেন, ‘যেখানে দেখিবে ছাই/ উড়াইয়া দেখো তাই/ পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন।’ আমরা কথায় কথায় বলি, আশায় মানুষ বাঁচে। প্রকৃতপক্ষে এটাই জীবন। হতাশ হওয়া যাবে না। চরম দুঃসময়েও আশার পথ খুঁজে বের করতে হবে। ২০২০ সালের শেষার্ধে করোনার আঘাত আর তৎপরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে ভঙ্গুর করে দিয়েছে। বাংলাদেশও নানাভাবে এর শিকার। সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাতটি এসেছে বিদ্যুৎ পর্যায়ে। দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে, বিষয়টি তা নয়। বরং সময় থাকতেই সাশ্রয়ী হওয়া জরুরি। যে কারণে সরকার এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটি যে স্থায়ী একটি সিদ্ধান্ত তাও নয়।

বিশ্ব পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানি সহজ হলে দেশবাসী আবার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাবে আশা করা যায়। কিন্তু জেনে রাখা ভালো, বিদ্যুৎ উৎপাদন উপকরণ আমদানি সম্ভব না হলেও দেশ অন্ধকারে তলিয়ে যাবে না। কারণ ১ আগস্ট নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ নিয়ে নতুন আশার আলো দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, চলতি বছর থেকেই আরো ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হতে পারে জাতীয় গ্রিডে। কারণ চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। দেশের বায়ুবিদ্যুতে এটি প্রথম বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটতে যাচ্ছে।

যখন এদেশেরই কিছু হতাশাগ্রস্ত ও ঈর্ষাপরায়ণ মানুষ বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো দুরবস্থায় দেখতে চায়, যারা প্রতিনিয়ত বর্তমান সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণিত করতে নানা ফন্দিফিকির খোঁজে তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে দুঃসংবাদ। কারণ তারা লোডশেডিংয়ের জন্য দায়ী করেছে সরকারকে। কিন্তু এদেশের সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, বিশ্ব পরিস্থিতির শিকার বাংলাদেশও। বর্তমান সরকারের আমলেই তারা উল্লেখযোগ্য এবং শতভাগ সন্তোষজনক বিদ্যুৎ সেবা পেয়েছেন। সুতরাং সংকটকালীন পরিস্থিতি মানতেই হবে। সরকারের পাশে দাঁড়াতেই হবে। বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন সংবাদ দেশের মানুষের জন্য সুসংবাদই বটে।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে ফেনীর সোনাগাজীতে মুহুরী নদীর বাঁধ এলাকায় বায়ুভিত্তিক দশমিক ৯ মেগাওয়াট সক্ষমতার দেশের প্রথম বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এর তিন বছর পর কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ১ মেগাওয়াট সক্ষমতার আরেকটি বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। কক্সবাজারে নির্মাণাধীন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার হওয়ায় তা প্রভাব সৃষ্টির মতো অবদান রাখতে পারবে।

বাংলাদেশের জন্য এ কেন্দ্রটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো— এটি কোনো প্রকার আমদানিকৃত জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং বছরজুড়ে পাওয়া বায়ু প্রবাহকে ব্যবহার করেই এটি শক্তি উৎপাদন করবে। বাংলাদেশের মোট ৭২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় অঞ্চল বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র। এনার্জি ট্র্যাকার এশিয়ার এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, এখানে দূষণমুক্ত শক্তিটি উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির পক্ষের অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এটি। তাদের মতে, বাংলাদেশের আছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস ব্যবহারের বিপুল সম্ভাবনা, যা এখনো অব্যবহূত রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের অন্তত ৫ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল সরকার। এরপর ২০২০ সালের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। কিন্তু কোনোটিই পূরণ করতে পারেনি। এখন সরকার পুনরায় ২০২৫ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। যদিও বর্তমানে ৪ শতাংশের কম বিদ্যুৎ নবয়ানযোগ্য উৎস থেকে আসে। তবে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগকে দেশের জ্বালানি উৎসে বৈচিত্র্য আনার দিক থেকে নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলা যেতে পারে।

বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ ছাড়া দেশের কোনো অগ্রগতি কল্পনা করা যায় না। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, শিল্পকারখানা সর্বত্র নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চলমান থাকার বিকল্প নেই। তাই সম্ভাব্য সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে।

সংগ্রহীত লেখা।

ফোকাস মোহনা.কম