মতলব উত্তর (চাঁদপুর): চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কৃষ্ণপুর বরোপিট নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। বড় ধরনের সহিংসতার আশংকা করা যাচ্ছে। গত দুই মাস ধরে আইন শৃঙ্খলার পরিপন্থি মারামারি, হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেই চলছে। গত ৫ এপ্রিল ও গত ৭ মার্চ এধরণের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে ৩/৪ টি মামলাও চলমান।
জানা গেছে, ওই ফিসারী নিয়ে কৃষ্ণপুর গ্রামের আঃ গণি ও আলী আরশাদ প্রধান দুই পক্ষের মধ্যে দেখা দিয়েছি চরম উত্তেজনা। এতে করে যেকোন সময় বড় ধরনের সহিংসতার আশংকা করছে এলাকাবাসী। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বলেন, এই ফিসারী নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে কয়েকবার হামলা মারামারির ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত এই ব্যপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমাধান করা জরুরি হয়ে পড়েছে। না হলে বড় ধরনের সহিংসতা হওয়ার আশংকা আছে।
খোঁজ নিয়ে যায়, গত ১৯৯৮ সালে আঃ গণি দলপতি হিসেবে কৃষ্ণপুর মৌজায় ১২৯, ১৩২, ১৩৩, ১৩৪, ৪৩০ ও ৬০ দাগে ৭৩ শতাংশ ফিসারী লিজ নিয়ে মাছ চাষ ও ভোগদখল করে আসছেন। তার দলে আরো রয়েছেন কৃষ্ণপুর গ্রামের আলী আরশাদ খান, হাসান খান, আবু তাহের খান, আঃ রশিদ আলম খান, বাশার খান, আলআমিন খান, বোরহান খান, সৈয়দ খান, খোরশেদা বেগম, সাজেদা বেগম ও পারুল বেগম গং। পানি উন্নয়ন কর্তৃক ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত একটি তালিকায় দেখা গেছে ১৯৯৮ সালে আঃ গণি দলপতি হিসেবে ওই ফিসারী লিজ আনে। উক্ত লিজের সকল কাগজপত্র এখনো আঃ গণি’র কাছে রয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ সাল পর্যন্ত আঃ গণি সরকারি কোষাগারে ওই লিজ নবায়নের টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু ২০১০ সালের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভিতরে পাউবোর সকল জায়গার লিজ বাতিল করে দেয়। ফলে আঃ গণি আর লিজের নবায়ন ফি জমা দিতে পারেন নি। সেই সূত্রে আঃ গণির লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু উক্ত ফিসারীর জায়গা তার দলে থাকা সদস্যদের গণের ওয়ারিশদের কাছ থেকে পাউবো একোয়ার করে নেওয়ার সূত্র ধরে ২০১০ সালের পরবর্তী সময়ে ভোগ দখল করে আসছিল। সম্প্রতি ওই ফিসারী নিয়ে একই গ্রামের আলী আরশাদ প্রধান, বিল্লাল প্রধান, শরীফ প্রধান, সালাম প্রধান গং সহ নতুন একটি দল তৈরি করে উক্ত ফিসারী মাছ চাষ ও ভোগদখল করতে চাইছে। মূলত এই কারণেই দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ দেখা দেয়।
আঃ গণি বলেন, আমি দলপতি হিসেবে ১৯৯৮ সালে লিজ আনি। ২০১০ সাল পর্যন্ত উক্ত লিজের বৈধ কাগজপত্র আছে। কিন্তু আলী আরশাদ প্রধান গংদের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নিয়ে ভাটোয়ারা মামলা চলছে। সেই সুত্র ধরে গত ২ মাস ধরে আমাকে উৎখাত করে ফিসারী দখল করতে চাইছে। আমার বাড়িতে তারা কয়েকবার হামলা দিয়েছে। ২০১২ সালে আমাকে ফিসারী দখল করা নিয়ে আমাকে মেরে রক্তাক্ত জখম করে, আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। এখন আবার গত ২/৩ মাস ধরে নতুন করে তারা বিভিন্ন পায়তারা শুরু করেছে। আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। আইনের কাছে সুষ্ঠ বিচার চাই।
এদিকে আলী আরশাদ প্রধানের ছেলে আনিছ প্রধান বলেন, আঃ গণি বিগত ৩০ বছর ধরে এই ফিসারী খাইতেছে। এখন আমরা বলেছি সবাই মিলে মাছ চাষ করবো। কিন্তু গণি রাজি হচ্ছে না। আমরা চাই গ্রামের সকলে মিলে মিশে ফিসারী চাষাবাদ করি। এই লক্ষ্যে আমরা ফিসারীতে সাইনবোর্ড দিয়েছি, আঃ গণি গং ওই সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেলে দিয়েছে এবং আমাদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করেছে। কিন্তু আনিছ প্রধান গং বর্তমান বা পূর্বের কোন লিজের কাগজপত্র দেখাতে পারে নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ভাবে একাধিকবার সমাধানের চেষ্টা করা হলেও কোন গ্রুপই কোন সিদ্ধান্ত মানেন নি। মতলব উত্তর থানার ওসি মোঃ রবিউল হক বলেন, উভয় পক্ষেরই লিজের বৈধ কাগজপত্র নেই। আঃ গণি বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। এই জায়গা যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করনীয় নেই। যদি ফৌজদারী অপরাধের কোন ঘটনা ঘটে তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
ফম/এমএমএ/