কুমিল্লায় টাস্কফোর্সের অভিযানে গ্রেফতার ৫

কুমিল্লা : কুমিল্লা নাজিরা বাজার মহাসড়কে বাস চাপায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট নিহতের ঘটনায় ঘাতক বাস চালক কে সনাক্ত করে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।
র‌্যাবের পৃথক অভিযানে জেলা সদরের ঝাগুরজুলি থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মদসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার ও মাদক বহন ব্যবহৃত প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে।
নগরীর নূরপুর হাউজিং থেকে ইয়াবা মদ গাঁজা ও বিভিন্ন মাদক সহ মাদক কারবারি দুই সহোদর কে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
গত ১০ মার্চ সকালে কুমিল্লা বুড়িচংয়ের নাজিরা বাজারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে মহাসড়কের উপর তিশা পরিবহনের বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে একটি মোটরসাইকেলকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। মোটরসাইকেল চালক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট মোঃ দিদার হোসেনের মৃত্যু হয়। দূর্ঘটনায় নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট ৪৫ বছর বয়সী দিদার হোসেন ময়নামতি ইউপির করিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা ছিলপন এবং তিনি বি-বাড়িয়া জেলার জেলার নবীনগর থানার শিবপুর গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে। দূর্ঘটনা পর ঘাতক বাস চালক কোন প্রকার সহায়তা না করে সড়কে বাসটি রেখেই পালিয়ে যায়।
এ দূর্ঘটনায় ময়নামতি হাইওয়ে থানার এএসআই মোঃ আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে সেদিনই একটি বুড়িচং থানায় সড়ক ও পরিবহন আইনে মামলা দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে র‍্যাব ১১ সিপিসি ২ একটি দল তদন্ত শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র‍্যাব-১১, সিপিসি-২ এর গোয়েন্দারা অতিদ্রুত ঘাতক চালককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ঘাতক চালক সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৩ মার্চ রবিবার দুপুরে জেলার দেবীদ্বার থানার দক্ষিন মিল্লাবাড়ী নিজ বাড়ি থেকে চালক বাবুল মিয়া (৩০) কে আটক করে। সে ঐ এলাকার মৃত ইদ্রিস মিয়ার ছেলে।
র‌্যাব ১১ সিপিসি ২ কুমিল্লা ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন জানান, প্রাথমিক ভাবে বাস চালক সড়ক দুর্ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি আরো জানান, কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা সনদ ছাড়াই হেলপার থেকে চালক হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলো সে। দুর্ঘটনার আগের রাতে না ঘুমিয়ে ক্লান্তি ও চোখে ঘুম নিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে গাড়ি চালাচ্ছিলো বাবুল। অতিরিক্ত গতির কারনে দূর্ঘটনাটি সংঘটিত করে। পরে স্থানীয় লোকজনের ভয়ে দূর্ঘটনা কবলিত বাসটি রেখে  দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে নিজের মুঠোফোনটি বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বুড়িচং থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিয়মিত টহলের অংশ হিসাবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-১১, সিপিসি-২ এর আভিযানিক দল ১২মার্চ সন্ধ্যায় পৃথক আরেকটি অভিযানে জেলা সদরের ঝাগুরজুলি মহাসড়ক এলাকা থেকে ৩৮৪বোতল বিদেশী মদসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীদ্বয় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দক্ষিন হাট গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে সাহিদ মিয়া এবং নরসিংদী জেলার মনোহরদী  থানার সৈয়দেরগাঁও গ্রামের ফজল আমিন এর ছেলে সেলিম হোসেন। অভিযানে মাদক পরিবহন কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়।
র‌্যাব জানায় প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে, দীর্ঘদিন যাবৎ কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশী মদসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহ করে আসছিল বলে স্বীকার করে। উক্ত বিষয়ে কোতয়ালি থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাদকের মতো সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে র‍্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান সিপিসি ২ কুমিল্লা ক্যাম্প অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
ইয়াবা মদ গাঁজা ও বিভিন্ন মাদক সহ মাদক কারবারি দুই সহোদর কে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর  ১৩ মার্চ রবিবার বিকালে কুমিল্লা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মৌসুমী আক্তারের নেতৃত্বে মাদকবিরোধী টাস্ক ফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় নগরীর নুরপুর হাউজিং এলাকার মেডিকেল রোডস্থ শাহআলম মিয়ার বাড়ি ও দোকানে তল্লাশী চালিয়ে দুই সহোদর কে আটক করা হয়। এবং তাদের দেয়া তথ্য মতে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা ২৬২ পিস ইয়াবা, ৫০০ গ্রাম গাঁজা, ১১ বোতল স্কাফ সিরাপ ও ২ বোতল বিদেশী মদ ও মাদক বিক্রির নগদ ৩৭৫০টাকা উদ্ধার ও জব্দ  করা হয়। গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা নগরীর নূরপুর উত্তরপাড়া এলাকার শাহআলম মিয়ার ছেলে বাবুল (৩৫) ও লিটন (৩৭)।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসান এর সার্বিক তত্বাবধানে, পরিদর্শক মোঃ তমিজ উদ্দিন মৃধাসহ সঙ্গীয় ফোর্স, জেলা পুলিশ, এনএসআই ও কাস্টমস সহ টাস্কফোর্স সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। গ্রেফতারকৃত মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে পরিদশর্ক মোঃ তমিজ উদ্দিন মৃধা বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করেছেন।
ফম/এমএমএ/

তাপস চন্দ্র সরকার | ফোকাস মোহনা.কম