চাঁদপুর: চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে মৌসুমের শুরুতে ইলিশের প্রাপ্যতা গত বছরের তুলনায় অনেক কমেছে। মে মাস থেকে মৌসুম শুরু হলেও ইলিশ না পেয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা। তবে দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ হাতিয়া থেকে আমদানি হওয়া কিছু ইলিশ দিয়ে ব্যবসায়ীরা বাজার ধরে রেখেছে। আড়তে ইলিশ কম থাকায় ক্রেতার সংখ্যাও কম। যে কারণে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মধ্যেও নেই কোন ব্যস্ততা। তবে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে প্রতিদিন আমদানি ও পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের আহরিত গড়ে ৫০-৬০ মন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময় দ্বিগুন ইলিশের আমদানি ছিল।
বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখাগেছে, স্থানীয় ইলিশ আমদানি কম হওয়ায় বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা সংখ্যা খুবই কম। আমদানি হওয়া ইলিশ ও অন্যান্য প্রজাতির মাছ কিছু কিছু আড়তে বিক্রি হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাছঘাটের যেখানে ইলিশ আমদানি হত, সে ঘাটটিও এখন নিরব। ইলিশ পরিবহনের সরঞ্জামগুলোও পড়ে আছে। সরবরাহ কম থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক এখন অবসর সময় কাটাচ্ছেন।
ফরিদগঞ্জ থেকে ইলিশ ক্রয় করতে আসা ক্রেতা মাসুদ জানান, ইলিশের দাম দেখছি। গত কয়েকদিনের তুলনায় দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ছিল ২হাজার থেকে ২২শ’ টাকা। আজকের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ৮শ’ টাকা।
মেসার্স মিজানুর রহমান কালু ভুঁইয়া আড়তের ম্যানেজার ওমর ফারুক জানান, হাতিয়া থেকে দুই সাইজের ইলিশ বেশী আসছে। আজকের বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ হাজার টাকা এবং দুইটায় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ হাজার টাকা।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সাধারণ সম্পাদক হাজী শবে বরাত সরকার জানান, ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে মে মাস থেকে। ভর মৌসুম হচ্ছে আগষ্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। মৌসুমের শুরু হলেও গত বছরের তুলনায় এ বছর মাছের আমদানি অনেক কম। আজকের বাজারে আড়তগুলোতে হাতিয়া থেকে আমদানি হয়েছে প্রায় ৫০মণ ইলিশ। স্থানীয় পদ্মা-মেঘনার ইলিশ আমদানি হয়েছে ৮-১০মণ।
তিনি আরো জানান, পদ্মা-মেঘনার ইলিশগুলো বেশীরভাগই জেলা সদরসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়ে যায়। আর আমদানি হওয়া ইলিশগুলো শেরপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ জেলায় রপ্তানি করা হয়।
সমিতির সভাপতি আব্দুল বারি জমাদার মানিক জানান, ইলিশের আমদানি কম হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে অনেকটা হতাশা বিরাজমান। কারণ গত বছর এই সময়ে বতর্মানের চাইতে দ্বিগুন ইলিশের আমদানি ছিল। ইলিশ কম পাওয়ার কারণও অনেক। বিশেষ করে নদীতে নাব্যতা সংকট, পানিতে দূষণ অন্যতম। এছাড়াও জাটকা মৌসুমে অসাধু জেলেদের জাটকা নিধন একটি কারণ। ইলিশের প্রাপ্যতা কেন কম হচ্ছে এই বিষয়ে সরকারিভাবে গবেষণা বৃদ্ধি করা দরকার।
ইলিশ গবেষক (অব.) ড. আনিছুর রহমান বলেন, মৌসুমের শুরুতে ইলিশ কিছুটা কম পাওয়া যায়। জুন মাসের পর থেকে ইলিশের প্রাপ্যতা বাড়ে। তবে ইলিশের বিচরণের পরিবেশ বিভিন্ন কারণে বিপরীত অবস্থায়। পদ্মা-মেঘনায় প্রচুর পরিমাণ দূষণ। নদীর তলদেশে ইলিশের কাঙ্খিত খাদ্য নেই। তবে ইলিশের প্রাপ্যতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের গবেষণা অব্যাহত।
ফম/এমএমএ/