ওমিক্রন : করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট

।। এস ডি সুব্রত।। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনে উৎপত্তি হওয়া করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে হানা দিয়েছিল ২০২০ সালের মার্চ মাসের ৮ তারিখ ‌ । মধ্যে একটু কমে আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে কমে গেলেও করোনা একেবারে যায়নি ‌ । সময়ে সময়ে করোনা রুপ পাল্টাচ্ছে । বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিচ্ছে।  ফাঙ্গাস , ডেল্টা ,আলফার পর  ইদানিং নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রম   বিভিন্ন    দেশে চোখ রাঙাচ্ছে বিশ্ববাসীকে  । সর্বোচ্চ চেষ্টা ও সতর্কতা সত্ত্বেও করোনা ভাইরাস কে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না । ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে সফলতার দ্বারপ্রান্তে যেতে না যেতেই শুরু হয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট  ওমিক্রম এর আক্রমন। অনেক দেশ নতুন করে লকডাউনের পথে যাচ্ছে।
এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা  জরুরি   বৈঠকে বসতে যাচ্ছে । এই বৈঠকের একটাই আলোচ্যসূচি ,তা হচ্ছে  আগামী দিনগুলোতে কিভাবে মহামারী থেকে পৃথিবীকে মুক্ত রাখা যায় । সে বৈঠকে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ২৯-১১-২০২১ ইং তারিখে  । এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন ।  বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত এমন বৈঠক এর আগে মাত্র আর একবার বসেছিল গত ৭৩ বছরের মধ্যে ‌‌ । এটা হবে দ্বিতীয় বৈঠক‌ ।মহামারি করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের ‘ওমিক্রন’ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ওমিক্রন সনাক্ত হওয়ার পর করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের যে সফলতা তা কিছুটা ম্লান হয়ে যাচ্ছে । দক্ষিণ আফ্রিকায় সনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাস এর এই ভ্যারয়েন্ট এর নামকরণ করা হয়েছে গ্রীক বর্ণমালার পনেরতম অক্ষরের নামানুসারে ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার চলতি বছরের মে মাসে ঘোষিত ভাইরাসের নামকরণ পদ্ধতি অনুসরণ করে  ওমিক্রনের নামকরণ করা হয়েছে । দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কমিউ-নিক্যাবল ডিজিজ (এনআইসিডি) জানিয়েছে, দেশটির কয়েকটি ল্যাবরেটরিতে গত ১৪ নভেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বর সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করা নমুনায় ওমিক্রন ধরনটি শনাক্ত হয়। যাচাই শেষে ২৫ নভেম্বর নতুন ধরন হিসেবে নিশ্চিত হওয়া যায়।
ডা. অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজির রয়টার্সকে বলেন,গত ১৮ নভেম্বর আমার ক্লিনিকের সাতজন রোগীর মধ্যে অপরিচিত উপসর্গ ছিল। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ধরনের থেকে যার পার্থক্য খুবই কম। ওইদিন একজন রোগী আমাকে অত্যন্ত ক্লান্তি অনুভব করার কথা জানান। তার শরীরে ও মাথায় হালকা ব্যথা অনুভব করছেন বলেও উল্লেখ করেন।’ ‘ওমিক্রন’ মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ছড়িয়েছে। পরে  যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ ধরন শনাক্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ধরনগুলোর মধ্যে ওমিক্রন সবচেয়ে বেশি মিউটেট  হয়েছে। তবে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত রোগীদের শরীরে তেমন উপসর্গ নেই বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ডা. অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজি। তিনিই রোগীদের মধ্যে করোনার নতুন এ ধরনটি প্রথম সন্দেহ করেন এবং পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত হন তিনি ।রোগীদের মধ্যে যে উপসর্গ ছিল, তা সাধারণ ভাইরাল সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত। অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজি  আরো বলেন, ‘ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই পুরুষ, যাদের বয়স ৪০ বছরের নিচে। আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে অর্ধেকই করোনা টিকার পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন। তরুণ রোগীদের ক্ষেত্রে ওমিক্রন খুবই অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে।
 ওমিক্রন আক্রান্তদের অধিকাংশই অতি মৃদু উপসর্গে ভুগছেন। আক্রান্তদের পেশীতে মৃদু ব্যথা, গলায় খুসখুস ভাব এবং শুকনো কাশি হচ্ছে। ‘ওমিক্রন’ সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৫ দফা পদক্ষেপ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।  নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা থেকেও অধিক সংক্রামক বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।দেশব্যাপী কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করতে ১৫টি পদক্ষেপ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে  আমাদের দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেগুলো হলো –১. দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথো ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সময় সময় ঘোষিত অন্যান্য আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বন্দরসমূহে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে।২. সব ধরনের (সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।৩. প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে গেলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।৪. রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে।৫. সব জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বউভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কমসংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে।৬. মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।৭. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।৮. আক্রান্ত দেশসমূহ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।৯. সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে ।সর্বোপরি সরকারের পাশাপাশি সকল জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে । সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় সেজন্য সকল দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে ।
লেখক:  কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ, বাংলাদেশ।
০১৭১৬৭৩৮৬৮৮ ।
subratadassulla@gmail.com

এস. ডি সুব্রত | ফোকাস মোহনা.কম