চাঁদপুর: পদ্মা-মেঘনায় ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রমে মা ইলিশ ধরার ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা গত মধ্যরাত থেকে আরোপের পূর্বে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই জেলা শহরের প্রায় সব মাছ বাজারে ইলিশের দর পতন হতে থাকে। কেজিতে হাজার ১২শ’ টাকা কমে বিক্রি হয় ইলিশ। ব্যবসায়ীরা বলেছেন ‘এবার ধরা খেলাম শেষ সময়ে’।
অথচ গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার এক কেজি ইলিশ বিক্রি হলো ২হাজা থেকে আড়াই হাজার টাকা করে। শুক্রবার এক কেজি ইলিশ বিক্রি হলো ২৮শ’ থেকে ৩হাজার টাকায়- যা ছিলো স্মরণাতীতকালে রেকর্ড।
লক্ষ্য করা গেছে, শনিবার রাত যত গভীর অর্থাৎ বাড়তেছিলো, কেজি প্রতি ইলিশের দামও কমে আসছিলো। বাজারে ক্রেতাও ছিলো কম। জেলার সবচাইতে বড় মাছ ঘাট ‘বড় স্টেশন মাছ ঘাটে’ও ইলিশ মাছের দর পতন হয়েছে।
এ ঘাটে কম দামে ১৫শ’ থেকে শুরু করে ১৭শ’ টাকা কেজি ইলিশ বিক্রি হয় গতকাল বিকেলে ও সন্ধারাতে। আলাপকালে জানান প্রবীণ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম ও সাজাহান সরদার।
শনিবার প্রায় ৩০০ মণ ইলিশের আমদানি হয় এঘাটে। তথ্য নিশ্চিত করে জানান মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আলহাজ্ব শবেবরাত সরকার। তিনি গনমাধ্যমকে বলেন, বিক্রির শেষ সময়ে এক কেজির ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৬শ’ থেকে ১৭শ’ টাকায়। ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৫শ’ টাকা। ৫০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১২শ’ টাকা কেজিতে।
অপরদিকে রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটায় শহরের ব্যস্ততম কাঁচা বাজার-বিপনীবাগ মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়- ইলিশ মাছ কেনার মানুষই নাই। চকচকে ইলিশ সামনে নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন বিক্রেতারা।
এমনটাই জানান বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন। বললেন-আজ পুরা ধরা খেলাম। মাছের দাম কমে গেছে। লোকসান হলো অনেক।
মফিজ ব্যাপারী, দেলোয়ার হোসেন শেখ, হাফেজ, খোরশেদ আলম, হামিদ বাবু নামে এই বাজারের মাছ বিক্রেতারা একই সুরে কথা বললেন।
এ বাজারে দেখা যায়, পদ্মার এক কেজির ইলিশ বিক্রি হলো ১৬শ’ টাকায়, ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হলো ১৫শ’ কেজিতে। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হলো হাজার টাকা কেজিতে। ছোট ইলিশ বিক্রি হলো ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা কেজিতে।
এ সুযোগে অনেক ইলিশ প্রেমিক মাছ কিনে বাড়ি ফিরছেন-হাসিমুখে রিকশায় উঠতে উঠতে কেউ কেউ বলেন, সদরের দাসাদী ও আমানউল্লাহপুর গ্রামের তিন বন্ধু –জসীম, আনোয়ার ও অন্য একজন। তারা এক সাথে ৬টি ইলিশ কিনেছেন ১ হাজার ৪৫০ টাকা কেজিতে ব্যবসায়ী খোরেশেদের কাছ থেকে।
রাত ১১ টায় এ বাজারে ২ জন নারী হিজরাও এসেছিলেন ইলিশ কিনতে। একই অবস্থা দেখা গেছে গতকাল শনিবার শেষ বিকেল থেকে সন্ধ্যারাত অবদি জেলা শহরের পাল বাজার, নতুনবাজার, পুরানবাজার, ওয়ারলেস বাজার, বাবুরহাট বাজার ঘুরে ঘুরে। মাছের সরবরাহ ছিলো যথেষ্ট ।
বিপনীবাগের ইলিশ ব্যবসায়ী আ: হামিদ বাবু, আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজন রাত ১১টায় জানান, অবিক্রিত ইলিশ গুলো ডীপ ফ্রিজে রেখে পরে বিক্রি করা হবে। এভাবে প্রায় ৫০ মণ ইলিশ বিপনীবাগ বাজারে অবিক্রিত থাকে।
ব্যবসায়ীরা বললেন-গত ২ দিন (শুক্র ও শনিবার) ভারতে ইলিশ মাছ রফতানি না হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। ইলিশের বাজারে দরপতন হলো।
ফম/ডিএ/এমএমএ/