
সভাপতির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ।
চাঁদপুর: মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিপদপ্তরের আয়োজনে জেলা ট্রাস্কফোর্স কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
তিনি বক্তব্যে বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় এবারও আমরা কঠোর থাকবো। যে কোন মূল্যেই হোক এই অভিযান সফল করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে নদী পাড়ের জেলে, জনপ্রতিনিধি, সচেতন মানুষকে তৎপর থাকতে হবে। আমরা চাইবো না গরীব জেলেদের আটক করতে। কিন্তু তারা কথা না শুলনে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হবো। অভয়াশ্রম চলাকালে আমাদের নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি সপ্তাহে দু’বার কম্বাইন্ড টিম অভিযান করবে। রাতের বেলায় বেশি মাছ শিকার হয়। তাই রাত্রি বেলার জন্যে একটি স্পেশাল টিম প্রস্তুত রাখতে হবে। খবর পাওয়ার সাথে সাথে যেন তারা অভিযান করে। সড়ক পথেও একাধিক চেকপোস্ট থাকবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, অভিযান চলাকালে একটি নৌকাও নদীতে নামতে পারবে না। অধিক গতি বা একের অধিক ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলো রিকুইজিশন করে রাখা হবে। সেগুলো নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, জেলা পুলিশ ব্যবহার করবে। আর এবছর আটক নৌকা সাথে সাথে নিলামে বিক্রি করে দেয়া হবে। হাইমচরে ২২ দিন যাতে কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ স্থায়ীভাবে থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। নদীর নাব্যতা রক্ষায় ড্রেজিং করতে হবে। ডুবোচর কেটে ফেলতে হবে। অভয়াশ্রমের ২২ দিন ড্রেজার বন্ধ থাকবে। নদীত ব্যক্তিমালিকানাধীন স্প্রিডবোট বন্ধ থাকবে।
জেলা প্রশাসক বলেন মৎসের কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নিয়ে বলেন, জেলা ট্রাস্কফোর্সের সভার আগে তাদের একটি সভা করা দরকার ছিলো। অনেকবার বলার পরেও চাঁদুরের নিবন্ধনকৃত জেলেদের হালনাগাদ তালিকা আপনারা দেননি। কেবল মাত্র বাতিল হওয়া জেলেদের তালিকা দিয়েছেন। আপডেট তালিকা দেননি। এটা খুবই দুঃখজনক। তবে তিনি হাইমচর উপজেলা থেকে তালিকা পরিপূর্ণ দেয়ায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান।
এছাড়াও জেলা প্রশাসক সভায় ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করার পাশাপাশি নিষিদ্ধ সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের কার্যক্রম এবং অপারেশন্যাল স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করেন। একইসাথে জেলেপল্লীসহ অন্যান্য জায়গায় এ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে মাইকিং এবং প্রচার প্রচারণারও নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি নির্দেশ দেন নিষিদ্ধ ২২ দিন মৎস্য আহরণে বিরত থাকা মৎস্যজীবীদের যেন জীবিকা সংকট না হয় সেজন্য সরকার প্রতিটি জেলে পরিবারকে ২০ কেজি হারে ভিজিএফ(চাল) প্রদান করবে। চাঁদপুর জেলার আওতাধীন ৭০ কি.মি. নদীপথে যেন ইলিশ নিধন না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড এবং অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক টহলে নিয়োজিত থাকবে। স্থল ও নৌপথে বিভিন্ন কৌশলগত জায়গায় চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে এবং সেসব স্থান থেকে বিরতিহীনভাবে টহল ও অভিযান পরিচালিত হবে। সেইসাথে স্থল ও নৌপথে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক সার্বক্ষণিক মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালিত হবে।
সভার শুরুতেই বিগত সভার কার্যবিবরণ, সিদ্ধান্ত এবং অগ্রগতি তুলে ধরেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায় বলেন, নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কন্ধ করতে হবে। অবৈধভাবে যেসব ড্রেজার বালু কাটে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। অভিযান চলাকালে মৌসুমি জেলের পাশাপাশি মৌসুমি আড়তদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা অসহায় জেলেদের নদীতে নামিয়ে সুবিধা নেয়। পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, নৌ-পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমতিয়াজ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, হাইমচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সাংবাদিক ফারুক আহমেদ, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ান, মৎস্যজীবী নেতা তছলিম বেপারী, শাহআলম মল্লিক প্রমুখ।
এসময় সভায় সকল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ বিভাগ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, জনপ্রতিনিধি ও জেলে নেতাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন স্প্রিটবোট বন্ধ রাখতে হবে। কারন স্প্রিটবোট দিয়ে মা ইলিশ পাচার করা হয়। রাজরাজেশ্বর, বোরো চর, বড়স্টেশন টিলাবাড়িতে প্রতি ঘরে ঘরে ইলিশ মজুদ করা হয়। এছাড়া শহরের টিলাবাড়ি, রনাগোয়াল, রামদাসদী, বহরিয়া এলাকার মা ইলিশ বিক্রির মৌসুমি হাট বন্ধ করতে হবে। মৌসুমি আড়তদার, দাদনদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফম/এমএমএ/