চাঁদপুর: ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ইলিশের প্রধান প্রজননক্ষম মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩ বাস্তবায়ন উপলক্ষে অংশীজনদের নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সব ধরণের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
শনিবার (৭অক্টোবর) সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ এ সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- মৎস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নৃপেন্দ্র চন্দ্র নাথ।
তিনি বক্তব্যে বলেন, আশ্বিন মাসের শেষ ও কার্তিক মাসের মাঝামাঝিতে মা ইলিশের প্রজননক্ষম। সামনে আমাবস্যা ও পূর্ণিমা আছে। আমি এই মন্ত্রণালয় যোগদানের পর প্রথম কম্বাইন্ড অভিযান করেছি। অভিযানে ১৩ থেকে ১৪ বছরের কিশোরদের নদী থেকে ধরা হয়েছে। তাদেরকে যেন এবার ব্যবহার করা না হয় সেদিকে সবাই খেয়াল রাখবেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের জাতীয় সম্পদ ইলিশ মাছ রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসার পাশাপাশি সচেতন হতে হবে। আইন মেনে ইলিশ শিকার হতে বিরত থাকতে হবে। মা ইলিশের ডিম ছাড়া যত নির্বিঘ্নে হবে, ইলিশের উৎপাদন ততো বৃদ্ধি পাবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রধান মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেছেন, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউ ১০টি আছে এর মধ্যে১টি হলো চাঁদপুর। মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ছয়টি গবেষণার দল ২২ দিন বিভিন্ন স্থানে কাজ করবে। ইলিশের যে সময় ব্রিডিং হয় সেটা আমরা নির্ধারণ করি। নদীর পানি আমরা পরীক্ষা করে থাকি।
চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হেদায়েত উল্লাহর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন-সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. আবদুস ছাত্তার।
নাজিম দেওয়ান বক্তব্যে বলেন, কারেন্ট যার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারেন্ট জাল যারা উৎপাদন করেন, যারা মজুদ করেন এবং যারা বিক্রি করেন তারা সবাই অপরাধি। চাঁদপুর সদরের প্রায় ২০ হাজার জেলে রয়েছে। এই তালিকা অনেক আগের। অনেক জেলে পেশা পরিবর্তন করেছে তালিকা থেকে তাদেরকে নাম বাদ দেওয়া হয় না। পুরাতন তালিকার সংস্কার হওয়া দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে হেদায়েত উল্লাহ বলেন, নদীতে নামলে কারেন্ট জাল পাওয়া যায়। এই কারেন্ট জাল মুন্সীগঞ্জে উৎপাদন হয়। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করে কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ করা যায় কিনা প্রধান অতিথি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এসিল্যান্ড। তিনি বলেন, অভিযানের সময় মূল নদী থেকে ধাওয়া দিলে জেলেরা খালে চলে যায়। খালের মুখ বন্ধ করতে হবে। এই কাজটি জনপ্রতিনিধিরা করতে পারেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন- হানারচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাত্তার রাঢ়ী, কল্যাণপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রনি, চাঁদপুর নৌ-থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান, সাংবাদিক মির্জা জাকির, মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি মানিকুর রহমান জামাদার, আওয়ামী মৎস্য লীগের সভাপতি মালেক দেওয়ান, ট্রলার মালিক সমিতির প্রতিনিধিসহ আরো অনেকে।
উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ক্ষেত্র সহকারী জামিল হোসেন প্রমূখ।
উল্লেখ্য, সরকার ঘোষিত মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে আগামী ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ। এই আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্ব্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।
ফম/এমএমএ/