ড. ইউনূস নোবেল জয়ী হওয়ার কারণে কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করার কারণে কারও বিচার করা যাবে না-এটি অসাংবিধানিক ও বেআইনি। ইউনূসের পক্ষে বিবৃতিতে এই কাজটিই করা হয়েছে। গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে।
ড. ইউনূসকে বিচার প্রক্রিয়া থেকে রক্ষার লক্ষ্যে পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ ও সেলিব্রেটি যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেখানে তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন। অথচ তাদের এই বিবৃতিই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিপন্থী!
গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে আইনের শাসন। আইনের শাসন না থাকলে গণতন্ত্র অর্থহীন। আইনের শাসনের অন্যতম মূল শর্ত হচ্ছে আইনের চোখে সকলের সমতা। আইন সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং আইনের ক্ষেত্রে কেউ কোন বিশেষ প্রাধিকার দাবি করতে পারে না।
এই বিবৃতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ সমূহের পরিপন্থী। আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মানবাধিকারের অংশ। বাংলাদেশের আদালতে চলমান ড. ইউনুসের মামলাগুলো স্থগিত করে আলাদা বিচারক নিয়োগ করে মামলাগুলো রিভিউ করার দাবি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার নীতি পরিপন্থী। পাশাপাশি এটি নাগরিকদের আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার সম্পর্কিত মানবাধিকারের পরিপন্থী।
আমাদের প্রশ্ন, যে সেলিব্রেটি ব্যক্তিত্বরা একটি স্বাধীন দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর হস্তক্ষেপের মত এই কাজটি করলেন, তারা কি তাদের নিজেদের দেশে এই কাজ টি করতে পারতেন? বিবৃতি দাতাদের অন্যতম হিলারি ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী নেতা হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিলেন। বিজয়ের দ্বার প্রান্তে পৌঁছেছিলেনও। আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে তার অযাচিত হস্তক্ষেপ কি তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কিংবা বিচার ব্যবস্থা সমর্থন করে?
তিনি ড. ইউনুসকে বিচারের বাইরে রাখতে চান। তিনি কি তার স্বামী রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটনের ক্ষেত্রে এটি করতে পেরেছিলেন? তার স্বামী বিল ক্লিনটনকে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় কেনেথ স্টারের ইনভেস্টিগেশনের মুখোমুখি, এমনকি অভিসংশন বা ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
তার পদমর্যাদা কিংবা পৃথিবী জুড়ে তার সুখ্যাতি তাকে রক্ষা করতে পারেনি। ক্লিনটনকে আইনি সুরক্ষা দেয়ার জন্য ডেমোক্রেটদের বিশেষ লিগ্যাল এইড ফান্ড গঠন করা হয়েছিল। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বিবৃতি দাতাদের পক্ষ থেকে ড. ইউনুসকে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আইনের শাসন ও মানবাধিকারের প্রতি হিলারি ক্লিনটনের এই অবজ্ঞাপূর্ণ ও অযাচিত কর্মতৎপরতা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিপন্থী।
হিলারির এই আচরণ দেখলে তার পূর্বসূরী বিংশ শতাব্দীর পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী নেতা এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রথম চেয়ারপারসন এলিনর রুজেভেল্ট অনেক ব্যথিত হতেন। এলিনর সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার খসড়া প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
বিচার বিভাগের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনজ্ঞ হিলারির এই হস্তক্ষেপের কথা জানলে হিলারির পূর্বসূরী জাস্টিস মার্শাল অনেক ব্যথিত হতেন।
লিখেছেন: ড. সেলিম মাহমুদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।