ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোরে। এই হামলাকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে মস্কো। রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের অন্তত সাতটি বড় শহরে হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশটিতে সামরিক আইন জারি করেছেন।
প্রতিটি নাগরিককে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে এখন পর্যন্ত যা জানা গেল :
হামলা শুরু হয় একসঙ্গে
ইউক্রেনের স্থানীয় সময় ভোর ৫টার দিকে রাজধানী কিয়েভসহ বড় বড় শহরগুলোতে একযোগে বিস্ফোরণ শুরু হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইউক্রেনকে আগেই তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে রুশ বাহিনী। স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৭টার দিকে রুশ বাহিনী বেলারুশ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে ইউক্রেনে প্রবেশ করে। রুশ বাহিনীর বিশাল এই বহরে নানা ধরনের সমরাস্ত্র দেখা যায়। ক্রিমিয়া ও দনবাস অঞ্চল দিয়েও রুশ বাহিনী ইউক্রেনে প্রবেশ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
শুরুতে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার
ইউক্রেনে হামলার শুরুতে রুশ বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও দূরপাল্লার গোলা ব্যবহার করে। কিয়েভে সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। রাশিয়ার সীমান্তসংলগ্ন খারকিভ শহরে হামলায় দূরপাল্লার গোলা ব্যবহার করে রুশ বাহিনী।
হামলা শুরুর পর পর ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তন গেরাশেঙ্কো সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয়েছে। রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী।
সিএনএন জানিয়েছে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করা হলেও মস্কো তা অস্বীকার করেছে।
ইউক্রেনের ৪০ ও রাশিয়ার ৫০ সেনা নিহত
রুশ অভিযান শুরুর পর দুই পক্ষের মধ্যে হতাহতের খবর আসতে শুরু করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ইউক্রেনের ৪০ জন ও রাশিয়ার ৫০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। তবে আলজাজিরা নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হতে পারেনি।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, রুশ বাহিনীর ৫০ সেনা নিহত হয়েছে। রাশিয়ার ছয়টি উড়োজাহাজও ভূপাতিত করেছে ইউক্রেনের সেনারা।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টা বলেছেন, রুশ হামলায় এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ৪০ নাগরিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক ডজন।
কিয়েভ ছাড়ছে বাসিন্দারা
রুশ হামলা শুরু হওয়ার পর প্রাণভয়ে কিয়েভ ছেড়ে যাচ্ছে বাসিন্দারা। ভোর থেকেই রাজধানী কিয়েভের সড়কগুলোতে বিপুলসংখ্যক গাড়ি লক্ষ করা যায়। টাকা তোলার জন্য ক্যাশ মেশিনগুলোর সামনে মানুষের লম্বা সারি দেখা যায়।
বিবিসির খবরে বলা হয়, কিয়েভের অনেক বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করে। তারা বলে, আত্মরক্ষায় তারা বেইসমেন্ট ও নির্দিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
অস্ত্র হাতে নেওয়ার আহ্বান জেলেনস্কির
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রুশ বাহিনীকে মোকাবিলায় দেশের প্রতিটি নাগরিককে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশ রক্ষায় যারাই এগিয়ে আসবে, তাদের হাতেই অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনেরই জয় হবে। রুশ বাহিনীর হামলা শুরু হওয়ার পর পর জেলেনস্কি দেশে সামরিক আইন জারি করেন।
পুতিনের কড়া হুঁশিয়ারি
ইউক্রেনে হামলা শুরুর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বুধবার দিবাগত রাতে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এ ভাষণেই তিনি ইউক্রেনে অভিযান চালানোর অনুমোদনের কথা ঘোষণা করেন।
ভাষণে পুতিন বলেন, ইউক্রেন দখল করে নেওয়ার অভিপ্রায় মস্কোর নেই। তিনি রক্তপাত এড়াতে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে মোতায়েন ইউক্রেনের সেনাদের অস্ত্র সমর্পণ করে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দনবাস অঞ্চলে নিপীড়ন ও গণহত্যার শিকার জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া।
পশ্চিমাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে পুতিন বলেন, যে কেউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিলে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
ফম/এমএমএ/