হাবীবুল্লাহ সিরাজ।। আল্লাহ বলেন, আসমান-জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে (লৌহ মাহফুজে) মাসগুলোর সংখ্যা হলো বার। তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটা হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। কাজেই ওই সময়ের মধ্যে নিজেদের ওপর অত্যাচার করো না। (সুরা তওবা: ৩৬)
রাসুল (সা.) বলেন, বছর হলো বারটি মাসের সমষ্টি- তার মধ্যে চারটি অতি সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক জিলকদ জিলহজ ও মহররম। চতুর্থটি জমাদিউস সানির ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস রজব। (বুখারি: ২৯৫৮)
মহররম মাসের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল হলো রোজা। তবে এই মাসকে কেন্দ্র করে শরিয়ত নির্দিষ্ট কোনো আমল দেয়নি। কেউ যদি এ মাসে কোনো আমল বাধ্য করে নেয়, এটা হবে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজার পরে আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে মহররম মাসের রোজা।’ এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলি কারি (রহ.) বলেন, ‘হাদিসের শব্দাবলি থেকে এ মাসজুড়ে রোজা রাখার ফজিলত বোঝা যায়। তবে নবীজির জীবনীতে পূর্ণ মাস রোজা রাখার কথা পাওয়া যায় না বা জানা যায় না। শুধুমাত্র আশুরার রোজার কথা পাওয়া যায়। হাদিসে আছে, আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) প্রথমে আশুরার দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরে যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন যার ইচ্ছা (আশুরার) রোজা রাখতো আর যার ইচ্ছা রাখতো না।’ (বুখারি: ২০০১)
আশুরার রোজার কারণ: আশুরার দিনে মুসা (আ.) রোজা রাখতেন। তার অনুসরণে ইহুদিরাও রোজা রাখত। নবীজি (সা.) মদিনায় গিয়ে ব্যাপারটি জানতে পেরে রোজা রাখেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছে। নবীজি বললেন, এটি কী? তারা বলল, এটি একটি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরায়েলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা (আ.) রোজা রেখেছেন।’ তিনি বললেন, মুসার (অনুসরণের) ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার’। অতঃপর তিনি রোজা রাখেন এবং অন্যদের রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (বুখারি: ২০০৪)
রোজার গুরুত্ব: নবীজির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল রমজানের রোজা। এই রোজা ফরজ হওয়ার আগে তিনি ঘোষণা দিয়ে আশুরার রোজা রাখেন। তাঁর কাছে রমজানের পর আশুরার রোজা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে আশুরার দিনের রোজার ওপর অন্য কোনো দিনের রোজাকে প্রাধান্য দিতে দেখিনি। (বুখারি: ২০০৬)
রোজার উপকারিতা: আশুরার রোজায় বিগত দিনের এক বছরের (সগিরা) গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি (এর দ্বারা) পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (মুসলিম: ১৯৭৬)
আশুরার রোজা রাখার সঠিক পদ্ধতি: আশুরার রোজা তিনভাবে রাখা যায়। উত্তম হলো আশুরার দিন (মহররমের ১০ তারিখ) রোজা রাখা এবং আশুরার আগের দিন অথবা পরের দিন আরেকটি রোজা রাখা। তবে শুধুু মহররমের ১০ তারিখ রাখলেও চলবে।