চাঁদপুর: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ৮৪নং আমুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসী আক্তারের অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয়েছে। গত কয়েকদিন যাবৎ তার এই দুনীতির তথ্য ভাইরাল হলে বিভিন্ন আইডি থেকে দূর্নীতির বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন। ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ মফিজুল ইসলাম তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসী আক্তারের এসব দূর্নীতির তথ্য তুলে ধরেছেন। পোস্টগুলো হুবহু তুলে ধরা হল।
আমি ৮৪নং আমুয়া কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (মতলব) সাবেক সভাপতি হিসেবে চ্যালেঞ্জ করে বলছি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতিবাজ। (আমি সভাপতি হিসেবে দুই মেয়াদে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে প্রায় ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা স্কুলের উন্নয়নে ব্যয় করি। আমার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর নতুন সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে ও আমার মেয়াদে রেখে আসা স্কুলের ফান্ডের টাকা দুইবার উত্তোলন করেন। স্কুলের নৈশপহুরী ঢাকায় আমার অফিসে এসে চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়, উক্ত টাকার কথা বর্তমান কমিটির কেউ জানেনা। আমি মিথ্যা বলে থাকলে আমার বিরুদ্ধে সামাজিক এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক, এবং স্কুলে আসা সরকারের অনুদানের সাড়ে চার লক্ষ টাকা আত্মসাৎ কারী প্রধান শিক্ষক ও তার সাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদের কে আইনের আওতায় আনার জন্য জোরালো ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। সচেতন নাগরিক হিসেবে কমেন্ট কিংবা শেয়ার করতে পারি কিনা ভেবে দেখুন।
মতলব উত্তর উপজেলার ৮৪ নং আমুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতিবাজ। আমার দেওয়া এই পোষ্টে অনেকে কমেন্ট করেছেন এতদিন কেন বললাম না আরো আগে জানানো উচিত ছিল। তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলছি, আমার সভাপতি হিসেবে মেয়াদ কাল শেষ হওয়া ও নতুন সভাপতি এবং কমিটি গঠনের পর আমি একাধিকবার গ্রামে যাই, বর্তমান আমাকান্দি গ্রামের মেম্বার স্কুল কমিটির সদস্য জনাব জাহিদ হোসেন ভাই, প্রধান শিক্ষক এবং নতুন ও পুরাতন কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে একাধিকবার আলাপ করি আমি বলি আসেন আমরা গ্রামবাসী স্কুল কমিটি প্রধান শিক্ষককে নিয়ে বসি আমি বিগত ছয় বছর স্কুলের সভাপতি ছিলাম আমি স্কুলের জন্য কি করে গেলাম কি নিয়ে গেলাম স্কুল ফান্ডে কি রেখে গেলাম নতুন কমিটি আমার এবং প্রধান শিক্ষক থেকে বুঝে নেওয়া উচিত। এ ব্যাপারে কারো কাছ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা না পাওয়াতে আমি সামাজিক মাধ্যম কে বেছে নিলাম। আমি সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে স্কুল ভবনের যত পুরাতন টিনও ভাঙ্গা টিন ছিল তা পরিবর্তন করি আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে। (পরিবর্তন করা পুরাতন মালামাল স্কুল থেকে হারিয়ে যায়)।
পরবর্তীতে আমি স্কুলে মিড ডে মিট ও সকল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে স্কুল ড্রেস প্রদান করি, তখন প্রধান অতিথি ছিলেন, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ মফিজুল ইসলাম, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও গজরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। উক্ত অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে সরকারিভাবে স্কুলের উন্নয়নের জন্য অনুদান আসে। সে অর্থ থেকে পুরনো স্টিলের চেয়ার টেবিল বেঞ্চের পরিবর্তে কাঠের চেয়ার টেবিল বেঞ্চ তৈরি করা হয়। (পরিবর্তন করা পুরাতন মালামাল স্কুল থেকে হারিয়ে যায়) ) স্কুলের উন্নয়নের জন্য আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে মা সমাবেশের অনুষ্ঠান করা হয় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। স্কুল ভবন পরিদর্শন করে উক্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে মাননীয় মন্ত্রী আমার স্কুলের উন্নয়নের জন্য ৩০,০০০ টাকা এবং ১৫ বান্ডেল টিন অনুদান দেন পাশাপাশি স্কুল ভ্রমণের জন্য দান করা চল্লিশ শতাংশ জমি উদ্ধারে সহযোগিতা করেন।(মন্ত্রী মহোদয়ের অনুদানের টিনএবং টাকার কিছু অংশ হারিয়ে যায়)।
সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, শিক্ষা অফিসার ইকবাল ভূঁইয়া সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ, তাদের উপস্থিতিতে আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে ক্রিয়া সামগ্রী বিতরণ ও মা সমাবেশ আয়োজন করি। উক্ত অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে স্কুলের উন্নয়নের জন্য সরকারি অনুদান আসে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা, উক্ত টাকা কিভাবে খরচ হয়েছে আমি জানি না। (এ টাকা থেকে অনেকগুলো টাকা হারিয়ে গেছে)। আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে স্কুলের জায়গার সীমানার নির্ধারণ করার পর আমি নগদ বর্তমান মেম্বার এবং স্কুল কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেনকে ৬০,০০০ টাকা দেই। উক্ত টাকার সম্পূর্ণ হিসাব আমাকে জাহিদ ভাই বুঝিয়ে দেন কিন্তু বর্তমান চাঁদপুর-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট রুহুল আমিন রুহুল, আমার আমন্ত্রণে এসে স্কুল এবং মাঠ পরিদর্শন করে স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য এক লক্ষ টাকা অনুদান দেন। (উক্ত টাকার কোন হিসাবআমার জানা নাই)। “স্কুলের উন্নয়নের জন্য একাধিকবার স্কুলের গাছ বিক্রি করা হয়েছে, এর মধ্যে একটি গাছ আমাদের গ্রামের রিপন সরকার কিনেছে টাকাও দিয়েছে। (কিন্তু এই গাছের টাকা গুলো হারিয়ে গেছে)।
গজরা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আমুয়াকান্দি গ্রামের মানুষগুলো ছিল একত্বাবদ্ধ, প্রত্যেকের ছিল সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি শ্রদ্ধা একের প্রতি অন্যের ভালবাসার। কোন মামলা মোকাদ্দামা ছিলনা, ছোটদের প্রতি বড়দের স্নেহ ভালবাসা, বড়দের প্রতি ছোটদের ছিল সম্মান শ্রদ্ধা, সমাজে ওয়াজ মাহফিল হতো একটি, যুব সমাজ একসাথে খেলাধুলা করত তাদের উদ্যোগে হতো অনেক সংস্কৃতি অনুষ্ঠান যাত্রাপালা নাটক আমি নিজেও একাধিকবার যাত্রাপালা নাটকে অংশগ্রহণ করেছি। সবকিছু পাল্টে যায় ২০১৭ সালের পর, এর জন্য হয়তো সম্পূর্ণরূপে আমি দায়ী, আমি আমুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়ে দুর্নীতির সাথে হাত মিলাতে পারেনি, সাদাকে সাদা বলি কালোকে কালো বলি, আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনেক কিছুই মেনে নেইনি যা সমাজের অনেক লোকই জানেন। এর মধ্যে একটি ঘটনা বলি একবার আমরা স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ে বসি, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল স্কুলের শিক্ষকদের জন্য নতুন চেয়ার টেবিল বানানো ব্যাপারে আলোচনা করব। তারপর যা হল অবাক হওয়ার বিষয়, প্রধান শিক্ষক আমাদের বললেন প্রধান শিক্ষকের স্বামী ফার্নিচারের দোকানে টেবিলের অর্ডার দিয়ে দিয়েছেন, আগামীকাল ছাত্ররা নিয়ে আসবেন। আমি সভাপতি হওয়ার পূর্বে একটা নিয়ম নীতি চালু ছিল স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মিটিং, স্কুলের যেকোনো ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা পালন করতেন তার স্বামী।
আমি ৬ বছর সভাপতি থাকাকালীন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রদের বিদায় অনুষ্ঠানের মিলাদ এবং অন্যান্য খরচ আমার ব্যক্তিগতভাবে বহন করেছি, এমনকি শিক্ষকদের জন্য আমারএবং তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাংবাদিক ইসমাইল হোসেন খান টিটুর অর্থায়নের গ্যাস সিলিন্ডার চুলা এবং অন্যান্য সামগ্রী কিনে দেই।যাতে স্কুলের উন্নয়নের টাকা থেকে এক টাকাও অপচয় না হয়। . আমার জন্য সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয় হলো মেইন রাস্তার সাথে উদ্ধারকিত ৪০ শতাংশ জায়গার মধ্যে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক বারবার বাধা সৃষ্টি করতেছেন।উপজেলায় নতুন ভবন নির্মাণের আলোচনায় বলেছেন গ্রামবাসীর চায় পুরনো জায়গায় ভবনটি নির্মাণ হোক। (এটা প্রধান শিক্ষকের সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা) পরবর্তীতে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সহযোগিতায় নতুন জাগায় মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করি। মাটি পরীক্ষা করানোর পরে, ডিজাইনের স্বাক্ষর করতে প্রধান শিক্ষক অস্বীকৃতি জানায়, তিনি উপজেলায় মিটিংয়ে বুঝাতে চান পুরান স্কুল ভবন থেকে নতুন স্কুল ভবনের দূরত্ব আধা কিলোমিটার। পরবর্তীতে উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার মহোদয় সশরীরে পুরাতন স্কুল ভবন এবং নতুন জায়গাটি পরিদর্শন করে তিনি ষাট মিটার দূরত্ব বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন। নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকের এত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কারণ কি? নতুন স্কুল ভবন নির্মাণে প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত জানতে পাই, ০১/০৬/২০২৩ইং উপজেলায় যাওয়ার পরে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার মোঃ অলিউল্লাহ বলেন, প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসী আক্তারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা লেখি হয়েছে, সেই বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা তাকে নোটিশ করেছি, সকল কাগজপত্র নিয়ে স্বশরীরে হাজির হওয়ার জন্য। পরবর্তীতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফম/এমএমএ/