
যুবক অনার্য
মাঠ পেরিয়ে গেলেই সেই বাড়ি যেখানে দুঃখগুলি ব্যবচ্ছেদ করে রঙ মেখে বিক্রি করা হয়। পদস্থ অফিসারগণ নাকি এসকল দুঃখগুলি কিনে নিয়ে বিক্রি করেন অফিস পাড়ায় । আমাদের পরিচিত একটি গাঙ শালিক আপাতত পাহারা দিচ্ছে সেই বাড়ি।আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম -এখানে কি আমার মত নিতান্ত ভিখিরিগণ আসে টাসে নাকি! সে বলেছিল : এখানে ভিখিরিদের প্রবেশ নিষেধ এটা মূলত একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান,নিয়ন্ত্রণ করছেন রাজনৈতিক ডাকাতগণ।রাজনীতি শব্দটি শুনেই আমার মুখ তেতো হয়ে গেলো তাই করি অনুরোধ পুনরায় পাখিটিকে- তোমার কাছে শিল্প সাহিত্যের খবর সবর আছে নাকি কিছু! সে বলে : সে তো সেই নূর হোসেনের দশকেই মানে নব্বইয়ের দশকেই শেষ হয়ে গেছে।অদূরে একটি বালুর ঢিবির দিকে তাকিয়ে কথাগুলি ওর আমি ভুলে যেতে চেষ্টা করি কেননা এ কথা বাজারে ছেড়ে দিলে শূন্য ও দ্বিতীয় দশকের কবি কিংবা অকবি হোম্রা চোমরাগণ আসবে ভীষণ তেড়ে দাউ বটি আর চাপাতি নিয়ে কারণ আজকাল কবিরাও রাজনৈতিক ষন্ডাদের চেলা, তাই চেপে যাওয়াই নিরাপদ।আমি বলি :দুঃখগুলি আসলে কী বা কেমন! সে বলে : এর নাম রাখা হয়েছে
দুঃখকেন্দ্র আসলে এখানে দুঃখ বোলে কিছু নেই। এখানে পাবে তুমি নয়নলোভন রমণিকূল মাদক অস্ত্র ইত্যাদি।আর যারা কিনতে আসেন তারাও বস্তুত কোনো অফিসার নন।বলি:তবে কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানে না এসব কাজকামের আসল খবর! পাখি:আ -রে বোকা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই তো দুঃখকেন্দ্রের জন্মদাতা।আমার যা বোঝার আমি বুঝে যাই।দ্রুত অই স্থান ত্যাগ করে ফিরে আসি।অদূরে বালুর ঢিবি তারপর গ্রাম গ্রামের পর বায়ু দুষিত শহর- এইতো এই দেশ,এর চেয়ে খুব বেশি বড়ো কিছু তো নয়।আমি ফিরে আসি আমার প্রিয় শহরে কিন্তু অই ঘটনার পর আমার সমস্ত সাইনবোর্ড মিথ্যে মনে হয়।হাসপাতাল লিখা থাকলে মনে হয় এটি আসলে একটি কসাইখানা এন্টিকরাপশন ব্যুরো হলে মনে হয় এটি আসলে করাপশন ব্যুরো দুদক দেখলে মনে হয় দুচক মানে দুর্নীতি চর্চা কমিশন।আমার এমনকি স্কুল ঘরটিকেও সন্দেহ হয়:ওখানে মাষ্টার মশাইগণ আর পন্ডিত মশাই আছেন কি! নৈতিক কিছু শিক্ষাটিক্ষা দেন নাকি তাদের ছাত্রবৃন্দ হয়ে উঠবে ঘুষখোর লম্পট ধর্ষক ইত্যাদি।আমি তবে লুকোবো কোথায় গিয়ে!এসবের বিরুদ্ধে আমার কি সত্যিই কিছু করণীয় নেই, নেই দায়বদ্ধতা! কিছু করতে গেলেই জেল হাজত গুমের ভয়ে এই ভীরু আমি সব কিছুতেই পিছিয়ে যাই সেল্ফিশের মতো পিতৃদত্ত প্রাণটাকে আপ্রণ বাঁচিয়ে রাখবার এক অন্ধ তাগিদে!
আজকাল যখনই আয়নার সামনে দাঁড়াই – দেখি একজন দেশদ্রোহীর সংগে আমার চেহারার তেমন কোনো অমিল নেই বরং মিলে যায় শতভাগ!