প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আবাদি জমি রক্ষায় পরিকল্পিত শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে যুব ও নারীদের এ খাতে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যত্রতত্র কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। আবাদি জমি ও তিন ফসলি জমির কোনো ক্ষতি করা যাবে না। শিল্পায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার (২০ নভেম্বর) সকালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) ৫০টি শিল্প ইউনিট, প্রকল্প ও সুযোগ-সুবিধা উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগদান করে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ৫০টি শিল্প ইউনিট ও অবকাঠামোর উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে গিয়ে আজ আমি খুবই আনন্দিত। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময় বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দেন এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের মান ও মর্যাদা বিশ্বে যেন আরো বৃদ্ধি পায় সে পদক্ষেপ নেয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছি বলেই ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা ধরে রাখতে হবে। সেজন্য আমাদের ব্যাপক শিল্পায়ন দরকার। কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিসহ আমাদের নতুর নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে এবং জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি করে তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে নিজস্ব বাজার সৃষ্টি হয়। সরকার সে কারণেই সারাদেশে ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং প্রথম বার ক্ষমতায় এসেই বেশ কয়েকটি ইপিজেড নির্মাণ করেছে।
তিনি উত্তরবঙ্গে প্রথম নীলফামারির উত্তরা ইপিজেড প্রতিষ্ঠার কথা স্মরণ করেন বলেন, সারাদেশে ইতোমধ্যে ইপিজেড করতে ৯৭টি জায়গায় তাঁর সরকার ঠিক করে রেখেছে। সেখানে পর্যায়ক্রমে বিনিয়োগ আসবে। কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক ধাক্কা সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশে লাগলেও তাঁর সরকার সেটি সামলে নিয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখায় সচেষ্ট রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এরপর মরার ওপর খরার ঘা, রাশিয়া-উইউক্রের যুদ্ধ এবং স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনের ফলে আমাদের ক্রয় ক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা নেমে এসেছে। আমদানী পণ্যের দাম এবং পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ফলে অনেক দেশ মন্দায় ভ’গছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে চারটি কারখানার পাশাপাশি সিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের দুটি, মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাতটি এবং শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি শিল্প-কারখানা নিয়ে মোট ১৪টি কারখানার বাণিজ্যিক উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক অঞ্চলের সড়ক, ভবন, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোও উদ্বোধন করেন তিনি।
এছাড়া দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মাণাধীন ২৯টি কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকার প্রধান।
প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন একযোগে মোট আটটি ভেন্যুতে হয়। ভেন্যুগুলো হচ্ছ, গণভবন, ঢাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (বিএসএমএসএন মিরসরাই, চট্টগ্রাম), শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল (মৌলভীবাজার), কর্ণফুলী ড্রাইডক এসইজেড (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম), মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল (সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ), জামালপুর অর্থনতিক অঞ্চল (জামালপুর সদর), সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক (সাবরাং, কক্সবাজার) ও হোসেন্দি অর্থনৈতিক অঞ্চল (গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ)।
ফম/এমএমএ/